ডাকসু নির্বাচনে লড়বে ৯ প্যানেল



খবরঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে ঢাবি ক্যাম্পাসে সরব হয়ে উঠেছে ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনে ২৮টি পদের বিপরীতে ৫০৯টি ফরম জমা পড়েছে। মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। ইতোমধ্যে প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রদল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ মোট নয়টি প্যানেল। এবারের ডাকসু নির্বাচনের প্যানেলগুলোতে এসেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। শিবিরের ‘ইনক্লুসিভ’ প্যানেলের বিপরীতে ছাত্রদল স্থান দিয়েছে তরুণ ও পরীক্ষিতদের। (https://www.dainikbangla.com.bd/national/56934)

মন্তব্যঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসনের নামে এক উপহাসের প্রতীক হল ডাকসু। পাকিস্তান আমলের ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় হস্তক্ষেপ ও দমন-পীড়ন থেকে মুক্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে ঢাবি স্বায়ত্বশাসন অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশ আমলের ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী অব্যাহত রেখেছে। ঢাবির পার্লামেন্ট নামে পরিচিত ‘ঢাবি সিনেটের’ ১০৫ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি (ডাকসু কমিটি থেকে)। ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি ও ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধির তুলনায় এই সংখ্যা নিতান্তই ছেলেভুলানো। তাছাড়া স্বায়ত্বশাসিত ঢাবির মন্ত্রীসভা হিসেবে পরিচিত ১৮ সদস্যের “ঢাবি সিন্ডিকেটে” সরকার নির্ধারিত প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতি নির্ধারিত প্রতিনিধি, ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ কোটার প্রতিনিধি এবং প্রভোস্ট, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, এমনকি প্রভাষক ও রেজিস্টার্ড গ্রেজুয়েটদের একজন করে প্রতিনিধি থাকলেও সেখানে কোন ছাত্রপ্রতিনিধি (ডাকসু থেকে) নেই। যার ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ন্যায্য দাবী-দাওয়া ‘সিনেটে’ উত্থাপন করে সেটাকে পাস করিয়ে ‘সিন্ডিকেটে’ নিয়ে গিয়ে বাস্তবায়নের একমাত্র পথ হল ‘অনুরোধ’ কিংবা জোড়ালো আন্দোলন করা। যার কারণে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিগুলো সবসময় অপূর্ণই থেকে যায় ও শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে আওয়ামী কিংবা বিএনপি সরকার-দলীয় দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে। 

তাই, ঢাবির সচেতন শিক্ষার্থীদের উচিত এই ‘ছেলেভুলানো’ স্বায়ত্বশাসনের ভিত্তি নিয়ে ও এই স্বায়ত্বশাসনে ডাকসুর অকার্যকর ভূমিকা নিয়ে জোড়ালো প্রশ্ন উত্থাপন করা। তাদের প্রশ্ন উত্থাপন করা উচিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজে থেকে কেন কেন্টিনের খাবারের মান বৃদ্ধি, হলে সিটের নিশ্চয়তা, গণরুম বিলোপ, র‌্যাগিং বিলোপ ও ছাত্রদের পরিবহন সমস্যার সমাধান করছে না! ঘটা করে ডাকসুতে ছাত্রপ্রতিনিধি বানিয়ে ছাত্রদের দিয়ে এসব অতিসাধারণ অধিকারকে বাস্তবায়ন করার হুজুগ কেন তোলা হচ্ছে যা বাস্তবায়ন করার কোন প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ডাকসুর নেই! মূলত ডাকসু হল ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য একটা ‘টোপ’। ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকে জাতীয়ভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উপস্থাপন ও ভবিষ্যতে ক্ষমতার অংশ হওয়ার হাতছানি দিয়ে এই বিশাল ছাত্রসমাজকে নিয়ন্ত্রণ করা হল এর মূল উদ্দেশ্য। বিগত ৬০-৭০ বছরের ইতিহাস থেকে এটা পরিষ্কার।

তাছাড়া, এখন পর্যন্ত ডাকসুর কোন সাবেক নেতারা জাতীয় রাজনীতিতে গিয়ে দেশবাসীর জন্য কোন নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধান হাজির করতে পারেনি, জাতির ত্রাণকর্তা হতে পারেনি, জনগণের কোন দুর্দশা দূর করতে পারেনি। ঢাবির সচেতন শিক্ষার্থীদের উচিত এর কারণ খুঁজে বের করা। ডাকসুর কোন সাবেক নেতারা দেশের জনগণের দুর্দশার মূল কারণ ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে কথা বলেননি এবং ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পূনর্বহালের দাবি জানাননি। ভবিষ্যতের কোন ডাকসু নেতা যদি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা সেকুলারিজমকে বিলোপ ও ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ না করেন, তাহলে অনাগত দিনে জনগণের সামনে তারা ধিকৃত হবেন এবং জনগণ তাদেরকে ঠিক সেভাবে ছুঁড়ে ফেলবে যেভাবে তাদের পূর্ববর্তীদেরকে জনগণ ছুঁড়ে ফেলেছে। 

    -    রিসাত আহমেদ


Previous Post Next Post