খবরঃ
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার ২২ শিক্ষার্থীকে হিজাব পরায় ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির মেয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে .……….. একাধিক অভিভাবক কালবেলাকে জানান, বসুন্ধরা শাখায় ষষ্ঠ শ্রেণির তাদের মেয়েরা অধ্যয়ন করছেন। প্রতিদিনের মতো এদিনও তারা হিজাব পরে ক্লাসে গিয়েছেন। পরে বাসায় ফিরে তারা জানান, হিজাব পরার কারণে তাদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মতো কেন হিজাব পরে এসেছে এ জন্য তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করা হয়। এমনকি হিজাব পড়ায় তাদের জঙ্গির মতো এমন মন্তব্য করার অভিযোগও করেন একজন অভিভাবক। (www.kalbela.com/dainikshiksha/campus/216466)
মন্তব্যঃ
দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাক্কওয়াবান মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব পড়তে বাধা দেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর পূর্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখেছি। প্রশ্ন হচ্ছে শতকরা ৮০ ভাগ মুসলিমের দেশে ক্ষুদ্র সেক্যুলারগোষ্ঠী কিভাবে ইসলামের বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে নিয়ে কটাক্ষ ও উপহাস করার মত সাহস দেখাতে পারে? মূলত তারা এমনটি করতে পারছে কারণ তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য হলেও তারাই এই সেক্যুলার-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ক্ষমতার মসনদে আরোহন করে আছে। এবং যে সেক্যুলার-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আমাদের উপর জোরপূর্বক বাস্তবায়িত আছে সেটিও তাদেরই ধারনকৃত ব্যবস্থা। ফলে, তারা তাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, মিডিয়া, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা - সবকিছু দিয়ে এই ব্যবস্থার চিন্তাসমূহ বাস্তবায়ন ও এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায়। ফলে, সেক্যুলার-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জন্য যখন ইসলাম পালনকারীরা থ্রেট হয়ে দাঁড়ায় তখনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অর্গানগুলো প্রচার-প্রপাগান্ডা চালাতে শুরু করে এবং অন্যদিকে ইসলামের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের পালন ও বাস্তবায়নকে এরা সর্বোতভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে আমরা দেখি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও সেক্যুলার মূল্যবোধ ও চিন্তা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যেমন সম্প্রতি বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস খোলা হয়েছে যারা মূলত সমকামিতার মত ঘৃণ্য বিষয়কে মানবাধিকার বলে স্বীকৃতি দেয় এবং সারা বিশ্বে তা প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। বাংলাদেশে এ অফিস খোলার মাধ্যমে দেশের মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সাথে এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করেছে পশ্চিমারা, আর এর সুযোগ করে দিয়েছে আমাদের দেশের এজেন্ট শাসকগোষ্ঠী। অন্যদিকে কেউ যদি সামগ্রিকভাবে ইসলামের দিকে প্রবেশ করে যেমনটি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু” (আল-বাকারাঃ ২০৮), তখন তাকে বলা হচ্ছে জঙ্গি!
সুতরাং এই শিক্ষিকার হিজাব-বিদ্বেষ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত চয়েস না বরং তা কাঠামোগত ইসলাম বিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ। বাস্তবতা হচ্ছে আমরা যতদিন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক এই মানবরচিত সেক্যুলার-পুজিবাদী ব্যবস্থাকে ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়ে বাঁচিয়ে রেখে আমাদের মাথার উপর নিয়ে ঘুরব ঠিক ততদিন এর ধারক ও বাহকেরা আমাদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের উপর আঘাত হানতে থাকবে। সুতরাং আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি আমাদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের জন্য সেক্যুলার শাসক ও বুদ্ধিজীবীদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকব নাকি নিজেদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ রক্ষায় নিজেরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
আমরা যদি চাই যে আমাদের ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধ রক্ষা পাক ও বাস্তবায়িত হোক তাহলে আমাদের এমন এক ব্যবস্থাকে আনতে হবে যা বিদ্যমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকল্প এবং আমাদের বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর সেই বিকল্প ব্যবস্থা ইসলাম ব্যতিত আর কিছুই নয় যা খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। খিলাফত রাষ্ট্রের আক্বীদা হবে ইসলামী আক্বীদা এবং এর ব্যবস্থাও হবে ইসলাম থেকে উৎসারিত। ইসলাম বহির্ভুত কোন চিন্তাকেই এখানে এন্টারটেইন করা হবে না। সুতরাং আমাদের প্রধানতম কাজ হচ্ছে সেক্যুলার শাসকগোষ্ঠী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের ভবিষ্যত ইসলাম দিয়ে রাঙ্গানোর উদ্দেশ্যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া। তখনই কেবলমাত্র ইসলাম বাস্তবায়িত হয়ে আমাদের জীবনকে আল্লাহ্’র দেয়া বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করার সুযোগ তৈরী হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, “তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (আল-হজ্জঃ ৪১)
মো. হাফিজুর রহমান