খবর:
আবারও বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এই বিধিনিষেধের আওতায় ভারতের ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটপণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবেন না। শুধু দেশটির মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানির সুযোগ রয়েছে। এমন বিধিনিষেধ দিয়ে আজ সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের কার্যালয় (ডিজিএফটি) থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ...বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ভারতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। এর বড় অংশ শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য। ভারতীয় ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার বাংলাদেশ (https://www.prothomalo.com/business/e5w79bdz8k)
মন্তব্যঃ
খাদ্য, তুলা, বিদ্যুৎ এবং শিল্পের অনেক কাঁচামালের জন্য বাংলাদেশের ভারতের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতার প্রবণতা পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পাশাপাশি দুঃখজনকভাবে বর্তমান সরকারের সময়েও দেখা যাচ্ছে। এমন একটা পারসেপশন তৈরি করা হয়েছে যেন এছাড়া আমাদের আর কোন গতি নাই। এর ফলে ভারত যখন-তখন বিধিনিষেধ, শুল্ক, বন্দর সীমাবদ্ধতা বা রপ্তানি বন্ধ করে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অথচ অঞ্চলভেদে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সক্ষমতা থাকলেও এই লক্ষ্যে নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করার বদলে সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। যেমন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর শর্তে বাংলাদেশকে পাটকল বেসরকারীকরণ ও বহু পাটকল বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়। এই কৃত্রিম নির্ভরশীলতার দৈন্যদশা কৃষি, প্রযুক্তি ও শিল্প খাত, এবং শিক্ষা ও জ্ঞান উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। একাত্তরের পর থেকে প্রত্যেক শাসকগোষ্ঠীর ভারতের প্রতি এই ভিক্ষুকসুলভ অবস্থান নেওয়ার কারণ কি? কেনই বা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্য কিংবা সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য মেনে সকল নীতি প্রণয়ন ও বাণিজ্য পরিচালনা করতে হয়?
বস্তুত বিদ্যমান নতজানু অর্থনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতি দ্ব্যার্থহীনভাবে এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ও সার্বভৌম নয়। তথাকথিত প্রবল শক্তিধর সুবিশাল ভারতের কাছে নতি স্বীকার করাই সবসময় একমাত্র অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা বলে মনে হয়। এই অধীনতা মূলত সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের গড়ে তোলা সেকুলার পুঁজিবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার অধীনে থাকার প্রত্যক্ষ ফলাফল। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের মতো তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখেছে। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ভারতের অধীনে থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামরিক দিক থেকে বহিরাগত শক্তির কাছে আজও অধীনস্থ— আঞ্চলিক ক্ষেত্রে ভারতের কাছে, আর বৈশ্বিক ক্ষেত্রে নব্য উপনিবেশবাদী যুক্তরাষ্ট্র–আইএমএফ–বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠীর কাছে। কাজেই বর্তমান জাতি-রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে থেকে বাংলাদেশ কখনোই প্রকৃত সক্ষমতা গড়তে পারবে না।
এর সম্পূর্ণ বিপরীতে, নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত রাষ্ট্র কখনোই এমন নির্ভরশীলতা বা অপমানজনক অবস্থা মেনে নেবে না। ইসলাম স্বাধীনতার (تَحرِير / liberation) সংজ্ঞা দিয়েছে এমনভাবে—রাষ্ট্র আইএমএফ নীতি, ডব্লিউটিও চুক্তি, ভারত কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনা নয়, বরং তার রাজনীতি, অর্থনীতি, বৈদেশিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা পুরোপুরি ইসলামের আদর্শিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “আর কখনোই আল্লাহ্ মু‘মিন উপর কাফিরদেরর কর্তৃত্বকে মেনে নিবেন না” (সূরা আন-নিসা, ৪:১৪১)। মুসলিমদের জন্য এমন অবস্থায় থাকা সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ যেখানে কাফির মুশরিকরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামরিক ক্ষেত্রে মুসলিম ভূমির উপর কর্তৃত্ব কায়েম করবে কিংবা নীতি প্রণয়নে প্রভাবিত করবে। খিলাফত রাষ্ট্র পাট শিল্পের বিকাশ সাধন করবে তার ভিশনারি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির বদৌলতে। কৃষি, শিল্প ও প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে খাদ্য ও শিল্প নিরাপত্তা গড়ে তোলা হবে, যাতে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের বিধি নিষেধ বা অবরোধ খিলাফতের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে না পারে। এছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যকে কেবল টিকে থাকার মাধ্যম হিসেবে নয়, বরং মুসলিমদের প্রভাব বিস্তারের কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে, আর অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন কখনো বিদেশি সরবরাহকারীর হাতে জিম্মি হবে না। উদাহরণস্বরূপ ইউরোপীয় শক্তিগুলো নানা বাণিজ্যিক অবরোধ ও অবরোধমূলক কৌশল প্রয়োগ করলেও, উসমানি খিলাফত বিকল্প জোট গড়েছিল (মামলুক ও এশিয়ার মুসলিম ব্যবসায়ীদের সাথে), এমনকি সিল্ক রোড ও সমুদ্রপথ ব্যবহার করে শত্রুদের এড়িয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য বজায় রেখেছিল। এছাড়া শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি বিদ্যমান থাকলে সম্ভাব্য শত্রু কিংবা শত্রু রাষ্ট্র তার নিজের স্বার্থের জন্য বাণিজ্য অব্যাহত রাখবে। যেমন চীন–ভারত সীমান্তে সংঘাত থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে বছরে শত শত বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরকে কৌশলগত শত্রু মনে করলেও, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারও তারা। প্রতিশ্রুত নবুয়তের আদলে খিলাফতও এমন কৌশল গ্রহণ করবে ইসলামী সীমারেখার মধ্যে এবং নেতৃত্বশীল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে, ইনশাআল্লাহ্।
- আলভি আরসালান