ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ভারতে। দেশটিতে আশ্রয় নেয়া নেতাকর্মীদের বড় অংশটি থাকে পশ্চিমবঙ্গে। বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভারতে শুধু অবস্থানই করছেন না, কলকাতার একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে ‘দলীয় কার্যালয়’ খুলে রাজনৈতিক কার্যক্রমও চালাচ্ছে। (https://www.kalerkantho.com/online/Politics/2025/08/08/1559496)
মন্তব্যঃ
ভারতের ‘পূর্বদিকে আরেকটি কাশ্মির’ তৈরীর মিশন দিয়ে জুলাই আন্দোলন দমনে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর একটি দলকে বাংলাদেশে পাঠানো ও নৃশংসভাবে আন্দোলন দমন করে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে তাদের ভারতে ফেরত যাওয়া নিয়ে হাসিনা ক্ষমতায় থাকতেই দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছিল। এরপর ভারত ৫ আগষ্ট হাসিনাকে দেশবাসীর ক্রোধের হাত থেকে রক্ষা করার পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করা ও হাসিনাকে আশ্রয় প্রদান করেই ক্ষান্ত হয়নি। বাংলাদেশের সাথে আমদানি রফতানি নিষিদ্ধ ও বাংলাদেশীদেরকে ভারতীয় ভিসা প্রদান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। এর পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে চরম মিথ্যাচার ও শত্রুতাপূর্ণ বক্তব্য প্রচার করে আসছে। ভারতীয় বাহিনী সীমান্তে নিয়মিত বিরতিতে বাংলাদেশী নাগরিকদেরকে হত্যা করে আসছে এবং সীমান্তে পুশ-ইন অব্যাহত রেখেছে। হাসিনার সহযোগী ‘খুনী’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জঙ্গি নাটকের নাটের গুরু মনিরুল ও গুম-খুনের মত অপরাধে জড়িত জেনারেলদেরকে ভারত আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। আর এখন খরব প্রকাশিত হচ্ছে ভারতে পালিয়ে থাকা এসব সন্ত্রাসীরা কলকাতায় রীতিমত অফিস খুলে সেখান থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার নীলনকশা করছে!
ভারতের এতগুলো শত্রুতাপূর্ণ পদক্ষেপের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের উচিত ছিল ভারতকে অফিসিয়ালি শত্রুরাষ্ট্র ঘোষণা করা এবং বাংলাদেশে ভারতীয় এম্বাসীকে বন্ধ করে দেওয়া ও ভারত থেকে বাংলাদেশের এম্বাসীকে প্রত্যাহার করে নেয়া। কিন্তু তা না করে ড. ইউনূস ভারতীয় এম্বাসীকে হাসিনার বাংলাদেশে থেকে যাওয়া দোসরদের লাইফলাইন হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই এম্বাসী থেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করার সকল ষড়যন্ত্রকে সমন্বয় করা হচ্ছে। এই এম্বাসীর আশির্বাদ ছাড়া মেজর সাদেক কিংবা লেফটেনেন্ট (বরখাস্ত) গুলশান আরা-দের পতিত হাসিনার দলের সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করার মত দু:সাহস কখনোই হত না। আর, বিনোদন তারকাদের সাথে ভারতীয় এম্বাসীর হটলাইন সর্বজনবিদিত; এই এম্বাসীর আস্কারা পেয়েই তারা এখন একযোগে মাথাচারা দিয়েছে।
ড. ইউনূস ও তার দল এনসিপির ভারতবিরোধী বক্তব্য হল মূলত লিপ সার্ভিস এবং জনগণের ভারত-বিদ্বেষের সাথে তালমিলিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জনের কূটকৌশল। এনসিপি এখন পর্যন্ত ভারতের সাথে দেশবিরোধী কোন চুক্তি বাতিলের দাবী উত্থাপন দূরে থাক তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবী পর্যন্ত জানায়নি। পিলখানা হত্যাকান্ডে ভারত জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকার পরও এনসিপি কিংবা সরকার ভারতের কাছে কোন কৈফিয়ত জানতে চায়নি, বরং এই ব্যাপারে তারা মুখে কুলুপ এটেছে। তারা মুখে হাসিনার বিচারের কথা বললেও হাসিনাকে দ্রুত ফেরত আনার জন্য কোন আন্দোলন করেনি। তারা সবখানে মব তৈরী করে করে দাবি আদায়ে পারদর্শী হলেও হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার দাবিতে ভারতীয় এম্বাসীর বাইরে কোন মব তৈরী করেনি! কারণ তাদের গুরু আমেরিকা চায় না তাদের ভারতবিরোধীতা ‘লিপসার্ভিস’ থেকে ‘বাস্তবে’ রুপান্তরিত হোক। ভারতের আধিপত্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় হল খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের সাথে ঠিক সে আচরণ করা যে আচরণ তারা বাংলাদেশের মুসলিমদের সাথে করে আসছে।
- রিসাত আহমেদ