খবরঃ
দেশে বিগত তিন বছরে দারিদ্র্য বেড়েছে। প্রতি চারজনের একজন এখন গরিব। ২০২০ সালে করোনা মহামারির আগে তিন দশক ধরে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, সেটা বাড়ছে। এটা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রা পিছিয়ে যাওয়ার লক্ষণ। দারিদ্র্যের এ হিসাব উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় করা ‘ইকোনমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউসহোল্ড লেভেল ইন মিড ২০২৫’ শীর্ষক এ গবেষণায় বলা হয়, গত মে মাসে এসে দেশের দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে, যা ২০২২ সালে সরকারি হিসাবে (পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়-ব্যয় জরিপ) ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। (https://www.prothomalo.com/business/economics/pggjpdz5uk)
মন্তব্যঃ
দেশে প্রতি চারজনের একজন গরিবের খবর যেমন বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরে। তেমনি এই অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ তা উঠে আসে ইদানিংকালের আরো বেশকিছু রিপোর্টে। যেমন, গত তিন বছরে দেশে দারিদ্র্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮%। বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে রয়েছে ২৪.৫% মানুষ। গত এক বছরে বাংলাদেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ ‘অতি গরিব’ হয়েছে, এমনকি অভিজাত এলাকা গুলশানেও দারিদ্র্য বেড়েছে। আগস্ট’২৫ এ জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকা শীর্ষ ৫ দেশের মধ্যে ৪র্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে, মানুষের আয়ের ৫৫%-ই খরচ হচ্ছে খাবারের পেছনে। দেশের ৮০% পরিবারকে সংসার চালাতে ধার করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভয়াবহ সংকটে রয়েছে এই পরিবারগুলো। এই সংকট যে বাস্তবতা তুলে ধরে তা হচ্ছে, ড. ইউনূস যে দারিদ্র, বেকারত্ব এবং কার্বণ নিঃসরণের যে তিন শূন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার উল্টো দিকে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু, কেন?
মূলত, ড. ইউনূস যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দিয়ে দারিদ্র এবং বেকারত্ব দূর করার স্বপ্ন দেখছেন মৌলিকভাবে এই ব্যবস্থাটিই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট এবং দারিদ্রতা-বেকারত্বের মৌলিক কারণ। কেননা, যে পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দ্বারা আমরা পরিচালিত হচ্ছি, ১৮শ শতাব্দিতে পশ্চিমা বিশ্ব এই ব্যবস্থাটি গ্রহণ করে যেন পূঁজিপতিদের বিশেষ করে যারা শিল্প কারখানাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তাদের পুঁজির সমৃদ্ধি ঘটে। অর্থ্যাৎ, পূঁজিবাদ তৈরিই হয়েছে জনগণকে লুটতে, জনগণকে সুরক্ষিত করতে না। এই লক্ষ্যে এই ব্যবস্থায় পূঁজিপতিদের বিশ্বের সম্পদ লুন্ঠনে যেকোন সম্পদকে ব্যক্তিমালিকানাধীন করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে এমনকি উক্ত সম্পদের উপর একটি দেশের সকল জনগণের অধিকার জড়িত থাকলেও। এর ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে বিশ্বের ৫০ ভাগ সম্পদ চলে যায় মাত্র শীর্ষ ১% লোকের হাতে। আর মোট বিশ্ব সম্পদের ৮৭ ভাগ চলে যায় মাত্র ১০% লোকের হাতে। আর পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব ৫০% লোক মাত্র ১ভাগ সম্পদের নাগাল পাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই শীর্ষ ৫% মানুষ মোট সম্পদের ৪০-৫০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। যা স্পষ্টতই তুলে ধরছে, পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পদের প্রবাহ সবসময় উর্ধ্বমুখী অর্থ্যাৎ, সম্পদ সবসময় পদ্ধতিগতভাবে শীর্ষ ১ থেকে ১০ ভাগ লোকের কাছে গিয়ে কুক্ষিগত হবে। আর বাকি জনসংখ্যা এ শীর্ষ ধনীদের দয়ায় বেঁচে থাকবে অর্থ্যাৎ, তাদের সম্পদের উচ্ছিষ্ট ট্রিকল ডাউন হয়ে নিচে প্রবাহিত হলে তা পেয়ে টিকে থাকবে। সুতরাং, যে ব্যবস্থা পদ্ধতিগতভাবেই মানুষকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে সে ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে দারিদ্র এবং বেকারত্ব দূর করার প্রতিশ্রুতি একটি সিস্টেমেটিক গলদ। তবে কি এমন কোন ব্যবস্থা নেই যা দারিদ্রতা এবং বেকারত্ব দূর করতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে, আমাদের বুঝতে হবে কিভাবে উমাইয়া খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তাঁর ৩০ মাসের শাসনকালের মাত্র কয়েক মাসে তাঁর রাষ্ট্রের জনগণদের এমন দারিদ্র মুক্ত করেছিলেন যে সেখানে আর যাকাত গ্রহণ করার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি! কিভাবে তিনি করেছিলেন? তিনি এটি করতে পেরেছিলেন মূলত ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বদৌলতে। কারণ, একমাত্র ইসলাম পদ্ধতিগতভাবে সম্পদের কুক্ষিগত হওয়াকে প্রতিরোধ করে এবং মানুষের মাঝে সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনকে সুনিশ্চিত করে। ইসলাম একটি রাষ্ট্রের সম্পদকে তিনভাগে ভাগ করে যথা (১) ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদ, (২) গণমালিকানাধীন সম্পদ এবং (৩) রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এই তিনভাগে ভাগ করার মাধ্যমে ইসলাম গণহারে সকলধরণের সম্পদকে ব্যক্তিমালিকানার সুযোগকে প্রতিরোধ করে। তাছাড়া, ইসলাম বিত্তশালী ব্যক্তিদের সম্পদের উপর গরীবদের হক নির্ধারণ করে দিয়েছে যাতে সম্পদ বিত্তশালীদের মধ্যেই ঘুরপাক না খায়। এমনকি ইসলাম, প্রয়োজন ছাড়া সম্পদের পুঞ্জিভূত করণকে শক্তভাবে নিষেধ করেছে। যার ফলে, ইসলামি রাষ্ট্রে ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বদৌলতে মানুষ দিনকে দিন দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি অর্জন করে। যা পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় রূপকথা ছাড়া আর কিছুই না। এছাড়া, ইসলামি রাষ্ট্রে জনগণের দায়িত্ব আমানত হিসেবে দেখা হয়। যা রক্ষা করা শাসকের জন্য ফরজ। এজন্য, ইসলামে শাসককে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং তার সুযোগ করাকে ফরজ দায়িত্ব হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু, পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ শাসকের সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা। এটিকে নিছক শাসকের প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখা হয়। যা পূরণ না করলে শাসক কখনো আইনত দণ্ডনীয় হবেনা।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম