খবরঃ
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা অংশীজন সংলাপের সমাপনীতে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, সন্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন মিয়ানমারের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন না করতে পারলে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবেনা। এদিকে সন্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।সাত দফার অন্যতম দাবি হিসেবে তিনি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। (https://www.youtube.com/watch?v=TuXMPH-iWVY)
মন্তব্যঃ
রোহিঙ্গা অংশীজন সংলাপে ডঃ ইউনুস বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখ, মিয়ানমারে এখন পাঁচ লাখের কম রোহিঙ্গা রয়েছে। যাদের উপর চলমান নিপীড়নের কারণে তারা মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে”। এদিকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের বলেন, “মংডু এলাকায় সেনা ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের শঙ্কায় অনেক রোহিঙ্গা লালদিয়াতে জড়ো হয়েছে। তারা সুযোগ পেলে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে।” [“‘বাড়ি ফেরার’ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আগে ‘বাড়ি ছাড়ছে’ রোহিঙ্গারা” শীর্ষক খবর প্রকাশ ২৩ আগষ্ট ২০২৫, The Territorial News]। আবার এই সম্মেলন চলাকালেই নাফ নদীতে বাংলাদেশী জেলেদের উপর আরাকান আর্মির তৎপরতা হঠাৎ বেড়ে যায়। [“নাফ নদীর মোহনায় মাছ ধরতে যাওয়া অর্ধ শতাধিক বাংলাদেশি মাঝিকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি” শীর্ষক খবর প্রকাশ ২৯ আগষ্ট ২০২৫, এইদিন]। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ্য, ব্যাংককভিত্তিক প্রতিরক্ষাবিষয়ক প্রকাশনা জেনেসের বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিসের ধারণা, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে বর্ষার সময় রাখাইনের রাজধানী সিত্তের দক্ষিণে কিয়াউকফিউ নিয়ন্ত্রণের জন্য হামলা শুরু করতে পারে আরাকান আর্মি।
অর্থাৎ নাফ নদীর ঐপাড়ে আরকান আর্মি-জান্তা সংঘাত যখন তুঙ্গে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নিপীড়ন যখন বাড়ছে, এমন বাস্তবতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি যে নিতান্তই ফাঁকা বুলি, বরং ইউনুস সরকার কর্তৃক বিশ্বের ৪০টি দেশের প্রতিনিধীদের জড়ো করার সাথে রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বার্থ নয় বরং অন্যকারো স্বার্থ জড়িত। যদিও আরাকান আর্মি একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিধনকারী বিখ্যাত বুদ্ধিস্ট মগ, তথাপি এর আগে এই সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছিলেন আরাকান আর্মির অনেকে আমাদের দেশে বিয়ে-শাদী করেছে তারা তো এখানে আসতেই পারে! আর খলিলুর রহমান বলেছিলেন, আমাদের সীমান্তে যেহেতু আরাকান আর্মি আছে তাদের সাথেইতো আমরা কথা বলবো। সম্মেলনের আহবানে এটা আরও পরিষ্কার হয়েছে যে ইউনুস সরকার আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার জান্তার সাথে যুদ্ধে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে সহায়তা করার লক্ষ্যে অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যবহার করে এই সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে নরমালাইজ করার চেষ্টা করছে। এই অঞ্চলকেন্দ্রিক আমেরিকার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে প্রণীত Indo Pacific Strategy ও Burma Act 2022 দেখলে বুঝা যায় আমেরিকার অনুগত ইউনুস সরকার কেন নির্লজ্জভাবে আরাকান আর্মির জন্য কাজ করছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে Burma Act এর মূল লক্ষ্য “Authorizing non-lethal support to ethnic armed organizations” অনুযায়ী আরাকান আর্মি আমেরিকার অন্যতম প্রক্সি। আরেক মূলনীতি হচ্ছে “Humanitarian Assistance for Displaced Civilian”। অর্থাৎ শুধু আরাকান আর্মিকে সহায়তা নয় ইউনুস সরকারের রাখাইন মানবিক করিডোর ও নিউমুরিং টার্মিনাল DP World কে দেয়ার প্রচেষ্টা, এবং Starlink কে লাইসেন্স দেয়ার সাথেও Burma Act তথা আমেরিকান স্বার্থ জড়িত। এর আগে ব্রিটেনের দালাল হাসিনা সরকার একইভাবে রোহিঙ্গা ও দেশের মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে অপর ব্রিটিশ দালাল মিয়নামারের জান্তা সরকারের প্রক্সি হিসেবে কাজ করেছে। সে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা জান্তা সৈন্যদের সেইফ এক্সিটের ব্যবস্থা করেছিল, সেন্টমার্টিন ও নাফনদী, বঙ্গোপসাগরে আমাদের নৌবাহিনী নামিয়ে জান্তা সরকারকে আরাকান আর্মির উপর হামলা করতে সহযোগিতা করেছিল।
এসব ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে উপনিবেশবাদীদের দালালরা শুধু মুসলিমদের জানমাল ও সম্মানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তা নয়, তারা নিজের দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়। এমনকি তারা জনগণের কাছে থাকা তাদের সকল গ্রহণযোগ্যতা সম্মান এবং তাদের রাজনীতি বিসর্জন দিয়ে হলেও, নিজেদের পতন দেখতে দেখতেও তারা তাদের প্রভুদের গোলামী করতে থাকে। কারণ তারা বিশ্বাস করে জনগণ পরিত্যাগ করলে তারা তাদের প্রভুর কাছে আশ্রয় নিবে! বিপরীতে খিলাফত রাষ্ট্রের জন্মই হয় রাষ্ট্রকে অন্যদেশের আগ্রাসন থেকে মুক্ত রাখার জন্য এবং দেশের মানুষের নিরাপত্তা রক্ষা ও মুসলিমদের জানমাল মর্যাদার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য। মদিনার আউস এবং খাজরাজ গোত্রের নেতৃবৃন্দ আশপাশের গোত্রগুলোর শতবছরের আগ্রাসন এবং নিজেদের মধ্যকার যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে বাঁচার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নেতৃত্বে এই নিরাপত্তা নিশ্চিতের শর্তে প্রথম ইসলামি রাষ্ট্র তথা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আর এর বিনিময় হিসেবে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সেই নিরাপত্তা প্রদানকারী মদিনার আনসার সাহাবীদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এবং তারপর খলিফাদের নেতৃত্বে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ইস্পাত কঠিন নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখেছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “একমাত্র ইমাম (খলিফা) হচ্ছে সেই ঢাল, যার পেছনে তোমরা যুদ্ধ কর এবং নিজেদেরকে রক্ষা কর” (সহীহ্ মুসলিম)।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
