খবরঃ
দেশে রাষ্ট্রীয় মদদে গুম-অপহরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গুমের মতো অপরাধগুলো প্রতিরোধে একটি স্থায়ী কমিশন গঠনসহ তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।… গুম প্রতিরোধে স্থায়ী কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়ে এনসিপির এই নেত্রী বলেন,… এমনকি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার নথিতেও কমিশনের প্রবেশাধিকার থাকতে হবে।… প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক তদন্ত সহায়তাও নিতে হবে।… (https://www.prothomalo.com/politics/vwrnvim7bc)
মন্তব্যঃ
গুম প্রতিরোধে গুম কমিশনের দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য স্পর্শকাতর ‘সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার নথিতে প্রবেশের মত প্রস্তাবনার উপস্থাপন করা’ জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দের গুম প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সদিচ্ছার অভাবকেই প্রমাণ করে। সেই সাথে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক তদন্ত সহায়তার নামে মার্কিনীদের কর্তৃত্ব পাকাপোক্ত করার প্রস্তাবনাটিও তাদের পশ্চিমা দাসত্বের মানসিকতার এবং রাজনৈতিক অসচেতনতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সেই দেশ, যার সরকার তার নিজ দেশেই গুম, খুন ও অত্যাচারের সাথে জড়িত। দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম ইনফরমেশন সেন্টারের তথ্য বলছে, পুলিশের গুলিতে গত ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সাত বছরে নিহত হয়েছেন সাড়ে সাত হাজার মানুষ। অত্যাচারিত হওয়ার সংখ্যা কোটির কাছাকাছি। আর দক্ষিন আমেরিকা থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি বাংলাদেশও মার্কিন সমর্থিত সরকার কিংবা মার্কিন প্রশিক্ষিত বিভিন্ন বাহিনী কর্তৃক গুমের ব্যপারেতো আমরা বাস্তব স্বাক্ষী। আমরা দেখেছি বাংলাদেশে বিগত ১৭ বছরে গুমের মূল হোতা হাসিনা সরকারের সাথে শেষ পর্যন্ত মার্কিনীরা সহায়তা করে গেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেও তারা (মার্কিনীরা) বলেছিল, ‘পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আগামী মাসগুলোতে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যাশা করছি’। এই ‘ঘনিষ্ট সহায়তা’ তারা করেছে হাসিনাকে গুমে সাহায্য করে। (পড়ুন, গোপন বন্দিশালায় জিজ্ঞাসাবাদে ‘আমেরিকানরাও’: গুম কমিশনের প্রতিবেদন)। আমরা জানি, এই মার্কিনীরাই কুখ্যাত গোয়ান্তানামো বে, আবু গারিব, কিংবা বাগরাম কারাগারের জন্মদাতা, যেগুলোতে দিনের পর দিন মানুষদেরকে গুম করে রাখা হয়। অর্থাৎ একদিকে আমেরিকা কর্তৃক সমর্থিত হাসিনা সরকার, আমেরিকা কর্তৃকই প্রশিক্ষিত বাহিনী দ্বারা গুম করতো। আবার অন্যদিকে যারা গুম প্রতিরোধে কাজ করতো, প্রতারক আমেরিকা তাদের পুরষ্কার দিয়ে নিজেদের দলে টানতো। (গুম কমিশনের নূর খান লিটন আমেরিকা কর্তৃক ‘গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার অ্যাওয়ার্ড’ পান)। আর এখন হাসিনা পরবর্তী সময়ে গুমের শিকার ব্যক্তিবর্গের প্রতি তথাকথিত ‘আন্তর্জাতিক সহায়তা’র ভান করে দেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংসে তাদের হাত হস্ত প্রসারিত করার পঁয়তারা করছে। আর জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ তাদেরকে সেই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ওকালতি করছে।
মার্কিনীরাসহ বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সকল সরকারসমূহ ও রাজনীতিবিদদের এই প্রতারনাপূর্ন অবস্থানের কারন হচ্ছে, তারা ম্যাকিয়াভেলিবাদের অনুসারী। ম্যাকিয়াভেলি শাসককে ভালোবাসা, প্রেম-প্রীতি, দয়া-দাক্ষিণ্য সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে প্রতারণা, কপটতা ও নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে ভীতির উদ্রেক করার যে নীতি শিক্ষা দিয়েছেন তাই ইতিহাসে ম্যাকিয়াভেলিবাদ নামে পরিচিত। জনগন সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির মত হলো, তারা ‘অকৃতজ্ঞ, অস্থিরচিত্ত, প্রতারক, কাপুরুষ, আত্মকেন্দ্রিক, ন্যায়নীতিবোধহীন ও অর্থলিপ্সু’। এজন্য তার মতে, ‘রাজনীতিবিদদের অবশ্যই তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেকোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে, এমনকি যদি তা নৈতিকতার বিরুদ্ধেও হয়’। তাই এই মতের (ম্যাকিয়াভেলিবাদ) অনুসারী রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, পূর্ব থেকে পশ্চিমে সর্বত্র জনগণ গুম, খুন এবং নির্যাতনের শিকার হবে এটাই স্বাভাবিক। আর তাই হাসিনা পরবর্তী সময়ে মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, যে দেশ থেকে গুম-খুন দূর হবে, তা মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই ম্যকিয়াভ্যালিয়ান বিশ্ব ব্যবস্থায় সম্ভব নয়। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে ‘আন্তর্জাতিক সহায়তা’র নামে ঠিকই এদেশে প্রবেশ করবে এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনীতিবিদদের মত ম্যাকিয়াভেলিয়ানরা তাদের জন্য সেই গ্রাউন্ড তৈরি করে দিবে, যা আমাদের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করবে।
তাই এমন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার, যা ম্যাকিয়াভ্যালির মত সীমাবদ্ধ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষের মগজ থেকে আসে না। রাজনৈতিক বন্দোবস্তুটি আসতে হবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছ থেকে। ইসলাম মানুষকে ‘অকৃতজ্ঞ, অস্থিরচিত্ত, প্রতারক, কাপুরুষ, আত্মকেন্দ্রিক, ন্যায়নীতিবোধহীন ও অর্থলিপ্সু’ মনে করার পরিবর্তে আল্লাহ্’র (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) প্রতিনিধি বা খলিফা মনে করে। তাই ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) কর্তৃক নির্দেশিত সুশিক্ষা ও সঠিক পথে পরিচালনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিকদেরকে চারিত্রিক গুণে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত করে। এখানে জনগন শাসককে ভালোবাসে, শাসকও জনগনকে ভালোবাসে। তাই এই রাষ্ট্রে শাসনের জন্য জনগণকে দমনে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও গুম-খুন করার প্রয়োজন পড়ে না।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম