হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল, যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠালো আরও ৩০ বাংলাদেশিকে



খবরঃ

"পুরা পেটে শিকল আছিলো, হাতে হাতকড়া ছিল, তারপর দোনো পায়ে কড়া লাগানো ছিল" এভাবেই ৬০ ঘণ্টার বিমানযাত্রায় অপরাধীর মতো আটকে রাখার কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুবেল (ছদ্মনাম)। ৫ সেপ্টেম্বর রাতে বিশেষ বিমানে হাত পায়ে শিকল পরিয়ে ৩০ বাংলাদেশীকে ঢাকায় নিয়ে আসে আমেরিকা। (https://www.tbsnews.net/bangla/bangladesh/news-details-386236)

মন্তব্যঃ

অমানবিক এই ডিপোর্টকে কেউ কেউ বলতে চায় এটা ট্রাম্পের আগ্রাসী মানসিকতা ও রাজনৈতিক অবস্থানের ফল, যুক্তরাষ্ট্রকে এজন্য দায়ী করা যায় না। বাস্তবতা হলো ওবামা-বাইডেনের সময়ও একই ধরনের কর্মকান্ড চলমান ছিল। ওবামা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসীকে বের করে দিয়েছিল যেজন্য তাকে “Deporter-in-chief” নামে ডাকা হতো। সর্বক্ষেত্রেই তাদের স্বার্থের জন্য মানুষকে ব্যবহার করে প্রয়োজন শেষে ছুড়ে ফেলা তথা কলোনিয়াল মানসিকতা প্রকাশ পায়। তবে Democracy, Freedom এসবের সবচেয়ে বড় সুবিধা উপনিবেশবাদীরা পেয়েছে বিশ্বজুড়ে এসব আদর্শ দিয়ে তাদের একটি সাহায্যকারী গোষ্ঠী বা দাস গোষ্ঠী তৈরি করতে পারে। ইউরোপিয়ানরা বাণিজ্যের ও দুর্নীতি কমিশন দিয়ে তাদের জন্য এরকম একটি সাহায্যকারী বা দাস গোষ্ঠী তৈরি করে হার্ড কলোনিয়ালিজম প্রতিষ্ঠা করেছিল। আর সফট কলোনিয়ালিজমে অনেক ক্ষেত্রে লাভের ভাগ না দিয়েও নিছক মিথ্যা আদর্শের মায়াজালে মুফতে তারে অপকর্মের অনেক সাহায্যকারী পেয়ে যায়। আমাদের শাসকগোষ্ঠী, প্রশাসন, মিডিয়া, বুদ্ধিজীবি, ব্যবসায়ী সমাজে অনেকেই এইসব আদর্শের এডভোকেসি করতে করতে শিকলহীন দাসে পরিণত হয়। এরা কোন কোন সময় আমেরিকান কোন কাজের সমালোচনা করলেও মোটা দাগে তাদের আদর্শকে শুধু নির্মোহ, নির্দোষই না, অনেক সময় আমাদেরও মুক্তির দলিল মনে করে! ফলে তারা নিজেদের এসব দাসত্বের মালা পুরো জাতির গলায় পরিয়ে দেয়। নাহলে কিভাবে আমাদের দায়িত্বশীলরা বলতে পারে “শিকল ওদের উড়োজাহাজের ভিতরে পরানো থাকতে পারে, যা আমাদের জুরিসডিকশনের মধ্যে পড়ে না”! কিভাবে আমাদের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো এমনকি নির্বাচন কমিশন, প্রধান বিচারপতি, সেনবাহিনী প্রধান এসব অমানবিক ডিপোর্টেশন চলাকালেই আমেরিকান চার্জ দ্যা এফেয়ার্সের সাথে একের পর এক বৈঠক করতে পারে? কেউ কেউ আবার তাকে শাড়ি উপহার দেয়! পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, তারা উপনিবেশবাদী কাফেরদের এসব আদর্শ ব্যবহার করেই উপনিবেশবাদীদের মতই নিজেদের নির্লজ্জ, অসন্মানজনক, বিশ্বাসঘাতকতার অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দেয়। একারণেই আমরা দেখি এরা শুধু আমেরিকারই নির্লজ্জ গোলামী করে তা নয়, ভারত, ব্রিটেন, চীন যেকারোই গোলামী করে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মির ক্ষেত্রেও তারা এই নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়েছে। একদিকে তারা আরাকান আর্মিকে বান্দরবানে জামাই আদর করেছে অন্যদিকে নাফ নদীতে শতশত বাংলাদেশী জেলেদের আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেলে এরা বলছে “মাছ ধরতে ধরতে এসব জেলেরা মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়েছিল”!

শেকল কিংবা শেকলহীন যেকোন দাসত্ব থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে ইসলামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা। ইসলামি ব্যবস্থা তথা খিলাফতে আইন, নীতি, মূল্যবোধ সবই আল্লাহ্‌ নির্ধারিত এবং শাসক যেহেতু নিজে এগুলো পাল্টাতে বা সঙ্গায়িত করতে পারে না এবং যেহেতু শাসক প্রতিনিয়ত আল্লাহ্‌র কাছে জবাবদিহিতার ভয়ে ভীত থাকে সেহেতু এই সিস্টেমে আভ্যন্তরীণ কিংবা বৈদেশিক কোন ধরণের কলোনিয়ালিজমের সুযোগ নাই। অন্যদিকে খিলাফত রাষ্ট্র একজন নাগরিকের জানমালের সুরক্ষাকে পুরো রাষ্ট্রের সুরক্ষা হিসেবে দেখে। ফলে খিলাফতের নাগরিকের মান-মর্যাদার উপর বিদেশী কোন শক্তি আক্রমণ করতে ভয় পায়। তাই মর্যাদাবানদের উচিত আমেরিকান তথা পশ্চিমা কাফেরদের দাসত্বের আদর্শ এবং এসব আদর্শের দাসত্বকারীদের হাত থেকে মুক্তি নিয়ে ইসলামের আদর্শে রাষ্ট্রটাকে গঠন করা। উমর (রাঃ) বলেছেন, “আমরা ছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি। আল্লাহ্‌ আমাদের ইসলাম দ্বারা সন্মানিত করেছেন। তাই যখনই আমরা আল্লাহ্‌ প্রদত্ত এই সন্মান ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা সন্মান খুজবো, আল্লাহ্‌ আমাদের লাঞ্চিত করবেন” (আল-মুস্তাদারাক (হাকেম))।    

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন 


Previous Post Next Post