ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি বেকার, স্নাতক ডিগ্রিধারীরা শীর্ষে



খবরঃ 

সবচেয়ে বেশি বেকার ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে ৬ লাখ ৮৭ হাজার বেকার আছে। এরপরের দুটি স্থানে আছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ। আজ বৃহস্পতিবার শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। দেশের বিভাগওয়ারি হিসাবে ঢাকা বিভাগের পর চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ লাখ ৮৪ হাজার, রাজশাহীতে ৩ লাখ ৫৭ হাজার, খুলনায় ৩ লাখ ৩১ হাজার, সিলেটে ২ লাখ ১৬ হাজার, রংপুরে ২ লাখ ৬ হাজার, বরিশালে ১ লাখ ৩৯ হাজার এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ৪ হাজার বেকার আছে। (www.prothomalo.com/business/economics/2ef61kgv2y)

মন্তব্য:

অনেকে বেকারত্বকে একটি ব্যক্তিগত সমস্যা মনে করেন এবং কারণ হিসাবে ব্যক্তির পর্যাপ্ত দক্ষতা না থাকাকে দায়ী করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—বেকারত্ব কি আসলে একটি ব্যক্তিগত সমস্যা? লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রাষ্ট্র যদি কর্মসংস্থান তৈরি না করে বা ব্যক্তির নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করার পরিবেশ তৈরি না করে, তাহলে কীভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই এটি সহজে অনুমেয় যে, বেকারত্ব কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং এটি একটি রাষ্ট্রীয় সমস্যা।

প্রকৃতপক্ষে এর মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, রাষ্ট্রের কোনো long term vision না থাকা। এই vision না থাকার ফলে রাষ্ট্রে দুটি জায়গায় ত্রুটি দেখা দেয়—

১. রাষ্ট্র তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে না, ফলে এই শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু বেকার তৈরি করে। অথচ শিক্ষা ব্যবস্থা হওয়ার কথা একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের একটি মাধ্যম কারণ এখান থেকেই রাষ্ট্র তার প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারে, যারা রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

২. ভারী শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি তৈরি হয় না। রাষ্ট্র যদি প্রোডাকশন খাত তৈরি না করে, তবে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। ফলে দক্ষ এবং বিপুল জনশক্তি থাকলেও তা রাষ্ট্রের কোনো কাজে আসবে না।

বাংলাদেশের মতো সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র, যার বিপুল জনশক্তি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরও সেগুলোকে কাজে না লাগিয়ে যদি দারিদ্র্যের চক্রে ফেলে রাখা হয়, তখন এখানে রাষ্ট্রের অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন আসে। এর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায় উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান IMF ও World Bank-এর বিভিন্ন চুক্তির শর্ত। যেখানে তারা একটি দেশকে ঋণ দেয় এবং সঙ্গে জুড়ে দেয় বিভিন্ন শর্ত। নব্য উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রগুলো তাদের উপনিবেশবাদ প্রতিষ্ঠানিকভাবে বিস্তারের জন্য এই IMF, World Bank এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে। যার মাধ্যমে তারা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে প্রাইভেটাইজেশন করে, কৃষিখাতের ভর্তুকি কমিয়ে তাদের চাপিয়ে দেওয়া SAP(Structural Adjustment Program) অনুসরণ করতে বাধ্য করে। ফলে তাদের নীতি অনুযায়ী পলিসি বানিয়ে দেশ এর অর্থনীতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং অর্থনীতি প্রোডাকশন-ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সার্ভিস-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত হয়। এর ফলে দেশের মিশন ও ভিশন তাদের হাতের মধ্যে বন্দি হয়ে যায় এবং রাষ্ট্র তার বিপুল জনশক্তিকে কাজে না লাগিয়ে বোঝা বানিয়ে রাখে। 

অন্যদিকে ইসলামের দিক থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় আল্লাহ سبحانه وتعالى কুরআনে সূরা আত-তাওবা তে বলেন— هُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلۡهُدَىٰ وَدِينِ ٱلۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوْ كَرِهَ ٱلۡمُشۡرِكُونَ

“তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে সকল দীনের উপর বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (9:33)

এই আয়াতে আল্লাহ্‌ সুস্পষ্টভাবে ইসলামী রাষ্ট্রের vision ও mission উল্লেখ করেছেন। ইসলামী রাষ্ট্র বা খিলাফত রাষ্ট্রের মিশন হবে ইসলামকে অন্যান্য সব দ্বীনের উপর বিজয়ী করা। এর জন্য খিলাফত রাষ্ট্র সমরভিত্তিক শিল্পকারখানা ও সাপোর্টিং ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করবে এবং কৃষিখাতকে গুরুত্বসহকারে দেখবে ও তার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে জোর দেবে। এর ফলে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং রাষ্ট্র তার বিপুল জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রদত্ত এই vision এর দিকে এগিয়ে যাবে।

অতএব, খিলাফত রাষ্ট্রের কাজ হবে নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা) নিশ্চিত করা। কাজ ও জীবিকা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা রাষ্ট্রের উপর ফরজ। ইসলাম এর ইতিহাসের দিক লক্ষ্য করলে দেখা যায় খলিফা রাশিদিন এর যুগে রাষ্ট্র সরাসরি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করত। কৃষকরা জমি পেতো, হস্তশিল্প ও বাণিজ্যের জন্য বাজার তৈরি হতো, আর দরিদ্রদের জন্য জাকাত ও ফাইসাল বিতরণ হত। ফলে জনশক্তি পুরোপুরি কাজে যুক্ত থাকত এবং বেকারত্ব প্রায় দেখা যেত না। শহর ও গ্রামে উৎপাদনভিত্তিক অর্থনীতি মানুষের জীবিকা নিশ্চিত করত এবং সমাজে ন্যায় ও সমৃদ্ধি বজায় থাকত। পূর্বের ন্যায় একই ধারাবাহিকতায় আগত খিলাফত রাষ্ট্র বেকারত্ব সমস্যার সমাধান করবে এবং মানুষের জীবনমানের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন করবে।

    -    আবির আবদুল্লাহ

Previous Post Next Post