বায়ার-সেলার সামিটে শিল্প উপদেষ্টা: জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ৩০ শতাংশ



খবর: 

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত জাতীয় জিডিপিতে প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখছে। পাশাপাশি শিল্প খাতে মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশ এখান থেকে আসে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থপতি ইনস্টিটিউটের মাল্টিপারপাস হলে ‘বায়ার-সেলার সামিট ২০২৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এ কথা বলেন। এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপ, বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে এ সামিটের আয়োজন করা হয়। শিল্প উপদেষ্টা বলেন, ‘এসএমই ফাউন্ডেশনের এ আয়োজন ক্লাস্টারভিত্তিক তৃণমূল উদ্যোক্তাদের সরাসরি বাণিজ্যিক ক্রেতাদের সঙ্গে যুক্ত করবে। পাশাপাশি নতুন বাজার তৈরি ও মেন্টরিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা বিকাশে সহায়তা করবে। (https://bonikbarta.com/bangladesh/I60ol7RFjftiISkO)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশ অঞ্চলটি পাট শিল্প, চামড়া শিল্প এবং ভারী শিল্পের জন্য আদর্শ হলেও, তা বিশ্ববাজারে সস্তায় গার্মেন্টস উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য প্রসিদ্ধ। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে পাট ও চামড়ার বিশাল শিল্প স্থাপন না করে তাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মাঝে অন্তর্ভুক্ত রেখে বৈশ্বিক বাজারে এর বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রশ্ন চলে আসে যে কেন বাংলাদেশ তার সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে পাট কিংবা চামড়া শিল্পের উপর গুরুত্ব আরোপ করছে না। ১৯৭৪ সালে প্রথম যখন বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণের জন্য দ্বারস্থ হয়, তখন থেকেই Comparative Advantage পলিসির পরামর্শ দিয়ে আইএমএফ বাংলাদেশকে ভারী শিল্প থেকে বিমুখ করিয়েছে। Comparative Advantage তত্ত্ব হচ্ছে – কোন রাষ্ট্র যদি কোন দ্রব্য কম খরচে উৎপাদন করতে পারে, তবে তার শুধু সেই শিল্পেই মনোনিবেশ করা উচিৎ। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৮০ সাল থেকে SAP (Structural Adjustment Programme) এর মাধ্যমে Liberalization, Privatization এবং Deregulation এর উপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র “শ্রমনির্ভর” শিল্পকেই বাংলাদেশের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে, এরশাদের আমলে এই “শ্রমনির্ভর” শিল্প হিসেবে শুধুমাত্র গার্মেন্টসকেই নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। Liberalization এর মাধ্যমে অন্যান্য জরুরি পণ্য অবাধ আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। Privatization এর জন্য রাষ্ট্রীয় শিল্প (পাট, ইস্পাত, চিনি) গুলোতে ভর্তুকি বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। Deregulation এর জন্য এই খাতগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে করেই চামড়া, পাট ও ভারী শিল্পের প্রবল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর Comparative Advantage তত্ত্বের ফাঁদে পড়ে। কারণ এই Comparative Advantage তত্ত্ব কোন রাষ্ট্রকেই স্বনির্ভর হতে দেয় না, বরং এই তত্ত্ব উপনিবেশবাদি শক্তিদের হাতে রাষ্ট্রগুলোকে জিম্মি রাখার ব্যবস্থা করে। যুক্তরাষ্ট্র নিজে তার কৃষি, ভারী শিল্প ও সামরিক শিল্পে এই Comparative Advantage তত্ত্ব মানে না। তাই বিগত শাসকদের মতই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের মধ্যে বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে আটকে রেখে বিশ্বব্যাংকের সাথে মিলে এক ধরনের প্রতারণার খেলা খেলছে।

তাই বাংলাদেশ নামক অঞ্চলকে যদি তার সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে স্বনির্ভর হতে হয়, তাহলে বৃহৎ শিল্পকে বাদ দিয়ে শুধু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপর গুরুত্বারোপ করে কোন লাভ হবে না। বরং বৃহৎ শিল্পকে বিকশিত করার মধ্য দিয়েই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে। কিন্তু এর জন্য কিছু আদর্শিক পলিসিগত পরিবর্তন দরকার। সেটার জন্য শাসকদেরকে এই ঔপনিবেশিক শক্তিদের নিয়োজিত সংস্থাদের পরামর্শক হিসেবে মেনে নেয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় লুট করা বা লুট হওয়াই একমাত্র অবস্থা। এর বদলে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার পলিসিগুলো এখানে প্রয়োগ করতে হবে। যেখানে কোন বঞ্চনা ও বৈষম্যের গল্প শোনা যাবে না। কারণ এই পলিসির প্রণেতা স্বয়ং আল্লাহ সুবহানুতাওয়ালা। প্রথম পলিসি- ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফতকে নেতৃত্বশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার আকাঙ্ক্ষা। এতে করে সে আইএমএফ ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের নতজানু করে রাখা পলিসি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। একটা নেতৃত্বশীল রাষ্ট্র কখনো পরনির্ভর থাকতে পারে না। দ্বিতীয় পলিসি- শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। খিলাফতের অর্থনীতি হবে প্রতিরক্ষাকেন্দ্রিক অর্থনীতি। প্রতিরক্ষা কেন্দ্রিক অর্থনীতির অপরিহার্য করণীয় হল সমরাস্ত্র তৈরির কারখানার পাশাপাশি সহায়ক শিল্প (Support Industry) হিসেবে স্টিল, লোহা, কয়লা, যানবাহন নির্মাণ, খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি শিল্প গড়ে তোলা। তৃতীয় পলিসি- রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধায়নে খনিজ সম্পদ উত্তোলন, প্রক্রিয়াকরণ ও শোধনাগার ব্যবস্থা। এতে করে বিদেশী কোম্পানির আধিপত্য শূণ্যে নেমে আসবে। চতুর্থ পলিসি- বিনিয়োগ। ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (FDI) বন্ধ করে রাষ্ট্র খাত ভেদে সরাসরি (মহাকাশ গবেষণা, যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ, রেলওয়ে ইত্যাদি), যৌথ (তেল উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) এবং ব্যক্তি খাতে(পাট, চামড়া, চিনি,অস্ত্র) ভর্তুকি প্রদান করবে। পঞ্চম পলিসি- কৃষি উন্নয়ন। যুক্তরাষ্ট্রের মনসান্টো কোম্পানির মত Genetically Modified বীজের হাত থেকে কৃষিকে রক্ষা করবে। টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিশ্চিত করবে। এতেও অনেক সাপোর্ট ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হবে।  

এই পলিসিগুলো সামগ্রিকভাবে প্রয়োগের ফলে বৃহৎ শিল্প এবং সহায়ক শিল্প হিসেবে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করবে। কারণ একমাত্র খিলাফত শাসনামলেই প্রত্যেকটা অঞ্চল তাদের নিজস্ব শক্তি ও সম্ভাবনা দিয়েই চলত। ঔপনিবেশিক শক্তিদের মত সম্পদ পাচারের ইতিহাস মুসলিমদের কখনো ছিল না। আল্লাহ সুবহাবহু ওয়া তাআলার দিকনির্দেশনা খলিফাকে চিন্তাগতভাবে এবং ব্যবহারিকভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের উন্নয়ন করতে সম্ভব করেছিল। 

    -    জাবির জোহান

Previous Post Next Post