যুক্তরাষ্ট্রের মন নরম করতে তুলা আমদানির চিন্তায় সরকার

 


খবরঃ 

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, নতুন করে আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ শুল্ক আরও কমাতে দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধি দলকে আহবান জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দল তাদের আশ্বস্ত করেছেন। এ মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তির সময় জানা যাবে।বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ছয় বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। অগ্রগতি এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক। আশা করছি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করার ফলে আরও কিছু সুবিধা পাওয়া যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।(https://ekattor.tv/financial/81790)  

মন্তব্যঃ 

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরোপিত শুল্ক আগ্রাসন বিশ্বব্যাপী আমেরিকার বৃহত্তর ট্রেড ওয়ারের অংশ। আমেরিকা সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে তার পতনশীল কর্তৃত্ব ধরে রাখতে অক্ষম হওয়ায় যুদ্ধের  বিকল্প হিসেবে শুল্ককে  হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের উপর নতুন করে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ আমেরিকার নব্য উপনিবেশবাদেরই প্রতিফলন। আমেরিকার এই শুল্ক আগ্রাসনের উদ্দেশ্য হলো, আমাদের দেশে উপর অর্থনৈতিক উপনিবেশবাদ শক্তিশালী করা  এবং আমাদেরকে পশ্চিমা আধিপত্যের ছকে আবদ্ধ রাখা। আর বর্তমান মার্কিনপন্থী দালালগোষ্ঠী আমেরিকার শুল্ক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে অনুগত দাসের মতো প্রভুর প্রতিটি নির্দেশই মাথা পেতে নিচ্ছে। অথচ, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে সতর্ক করে বলেছেন, “তারা তোমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করার সুযোগ পেলে তোমাদের অনিষ্ট করতে তাদের হাত ও জিভ প্রসারিত করবে, এবং তারা চাইবে যে তোমরা কুফরির দিকে ফিরে যাও” (সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াতঃ ২)। 


যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি নিরসণের অজুহাত দিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা আমাদের দেশের উপর আমেরিকার নব্য উপনিবেশবাদকে বৈধতা দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে (সূত্রঃ প্রথম আলো, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫)। অথচ, এই ঘাটতি হচ্ছে বাংলাদেশের মোট আমদানি-রপ্তানির মাত্র ৫% যা একেবারেই নগণ্য। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (EPB) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৪.৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (The Business Standard, 2024)। অপরদিকে, বিশ্বব্যাংকের ডেটাবেজ অনুযায়ী, একই সময়ে বাংলাদেশ মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রায় ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে (World Bank, 2024)। সেখানে ছয় বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি সহজেই বিকল্প বাজারে রপ্তানি সম্প্রসারণ বা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। অথচ, মার্কিন অনুগতগোষ্ঠী এ ঘাটতিকে বড় ইস্যু হিসেবে দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, তারা মার্কিন অর্থনৈতিক উপনিবেশবাদকে আমাদের দেশে সুসংহত করার পথ সুগম করছে। অথচ, তারা মার্কিন শুল্পের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সাথে করা জ্বালানি আমদানি চুক্তি বাতিল করতে পারত এবং বাংলাদেশের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো মার্কিন কোম্পানী শেভরনের কাছ থেকে ফিরিয়ে এনে বাপেক্স বা পেট্রোবাংলার নিয়ন্ত্রণে দেওয়া সম্ভব ছিলো, যা দেশীয় জ্বালানী ব্যবস্থাকে মজবুত করত। আবার মার্কিন পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর সাথে চুক্তি পুনর্বিবেচনা করে তাদের শর্তাধীন নির্ভরশীলতা কমানো যেত, যা আমেরিকাকে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতো কিন্তু মার্কিন দালালদের কাছ থেকে এ ধরণের পদক্ষেপ তো দূরের কথা, বরং যুক্তরাষ্ট্রের মন নরম করার জন্য তুলা আমদানির মতো তুচ্ছ বিষয়ে ছুটছে, যেন মনিবকে সর্বস্ব দিয়ে হলেও খুশি করা যায়। 


প্রকৃতপক্ষে, এই সকল ধর্মনিরপেক্ষ দালালগোষ্ঠী ভালো করেই জানে যে, তাদের ক্ষমতার আসল উৎস দেশের জনগণ নয়, বরং পশ্চিমা শক্তি। তাই তারা জনগণের পক্ষে দাড়ানোর পরিবর্তে প্রভুর পায়ের তলায় মাথা নোয়ানোকেই লাভজনক মনে করে। ব্রিটিশ লালিত হাসিনার পতনের পর এসকল নব্য মার্কিন দালালদের আবির্ভাব দেশের জনগণের জন্য নয়া দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে; কেননা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা হচ্ছে  উপনিবেশবাদের শিকড় এবং দালাল তৈরির কারখানা। বরং আমাদেরকে মুসলিম উম্মাহর একমাত্র রক্ষাকবচ ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার দিকে ফিরে আসতে হবে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয় ইমাম হচ্ছে  ঢালস্বরুপ, যার পিছনে থেকে তোমরা যুদ্ধ করো এবং নিজেদের রক্ষা করো”  (মুসলিম, হাদিস নং ১৮৮২)। উপনিবেশবাদীদের দমনে খিলাফত রাষ্ট্রের ভূমিকা ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত, ১৫৩৮ সালে সুলতান সুলায়মানের শাসনামলে উপনিবেশবাদী পর্তুগিজরা ভারত মহাসাগরের বানিজ্যিক রুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গুজরাটসহ উপমহাদেশের বানিজ্য ব্যহত করেছিল। তখন বাহাদুর শাহ পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে সহায়তার জন্য সুলতান সুলায়মানকে অনুরোধ করেছিলেন। সুলতান সুলায়মান বাহাদুর শাহের অনুরোধে হাদিম সুলায়মান পাশাকে নেতৃত্ব দিয়ে ৮০টি জাহাজ নিয়ে গুজরাটের ডিউ শহরে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন। পরবর্তিতে, উসমানীয় নৌবাহিনী পর্তুগিজদের প্রতিরোধ ভেঙে দিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করেছিল, যার ফলে পুরো ভারতবর্ষের বানিজ্য পুনরায় উন্মুক্ত হয়েছিল।

    -    মোঃ জাফর আহমেদ 


Previous Post Next Post