শুল্কসুবিধার পোশাক অর্ডারে তিন চ্যালেঞ্জ



খবরঃ 

ভারত ও চীনের তুলনায় বাংলাদেশি পণ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক কম হওয়ার ফলে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে লাভবান হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে রপ্তানি অর্ডার আসছে। বাড়ছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি। তবে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ ব্যাংকিং খাতের সংকট না কাটলে এ সুবিধা দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখা যাবে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, শুল্কসুবিধার বাড়তি তৈরি পোশাক অর্ডার নিতে এই মুহূর্তে তিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে কারখানা মালিকরা। এগুলো হলো- ১. গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কারখানা পুরোদমে চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না; ২. বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এলসি জটিলতা রয়ে গেছে এবং ৩. বন্দরে কাস্টমসে জটিলতা ও পণ্য ছাড়ে ধীরগতি। (https://www.bd-pratidin.com/last-page/2025/08/27/1151436)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের জন্য উপনিবেশবাদী আমেরিকার মাস্তানী সুলভ পাল্টা শুল্ক ৩৫% থেকে ২০% নির্ধারণকে আমেরিকার অনুগত অন্তর্বর্তী সরকার ড. ইউনুস ম্যাজিক হিসেবে চিহ্নিত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ড. ইউনূসের কারণে শুল্ক সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ : শফিকুল, ২৪ আগস্ট, ২০২৫, কালেরকন্ঠ। যদিও, আমেরিকার নিজের দেশের অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব বিবেচনা করে বেশীর ভাগ দেশের উপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ২০% এর নিচে পুনঃনির্ধারণ করেছে। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ কোন কোন দেশের ওপর কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প? ১ অগাস্ট ২০২৫, বিবিসি বাংলা। কিন্তু, পাল্টা শুল্কের নতুন হার ধার্য করার পর পোশাক রফতানিতে আস্ফালনের বিপরীতে সংকট ঘনীভূত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। সংকটের কারণ হিসেবে খাত সংশ্লিষ্টরা জ্বালানী এবং অর্থায়নের মত বিষয়গুলোকে নিয়ে এসেছে যেগুলো যেকোন শিল্পের জন্য লাইফ লাইন হিসেবে বিবেচিত। সচেতন পাঠকদের কাছে অজানা নয় যে বাংলাদেশে ১০০% রফতানিমুখী পোশাক শিল্প বিকাশে অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে স্বস্তা শ্রমিক, স্বস্তা জ্বালানী এবং ব্যাংকের ক্রেডিট ফেসিলিটি (ব্যাক টু ব্যাক এলসি)। অর্থাৎ, কোন প্রকার অগ্রিম মূল্য বা বিনিয়োগ না করে বিদেশী ক্রেতারা এই দেশে থেকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে পারছে নূন্যতম মূল্যে। এই দেশের পোশাক কারখানাগুলো কোন না কোন বিশেষ ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করে, তাই ঐ ক্রেতা কোন কারণে পন্য নিতে অস্বীকৃতি জানালে অন্য কোন ক্রেতার কাছে সঠিক মূল্যে ঐ পণ্য বিক্রয়ের কোন সুযোগ নাই। এছাড়াও যেহেতু, ক্রেতা পূর্বে মূল্যের কোন অংশই প্রদান করে নাই, পোশাক কারখানা মালিকের নিকট যেকোন মূল্য পণ্যগুলো ঐ ক্রেতার নিকট সরবরাহ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। বিদেশী ক্রেতা বা ব্র্যান্ডের সাথে বাংলাদেশী পোশাক কারখানা মালিকদের সম্পর্ককে বৃটিশ উপনিবেশের নীল চাষিদের সাথে বৃটিশ বণিকদের সম্পর্কের সাথে তুলনা করা যায়। এই দেশে উৎপাদিত নীল বিক্রয় করে বৃটিশ অর্থনীতি এবং বণিকরা সমৃদ্ধ হলেও এদেশের কৃষক এবং শ্রমিকরা নীল চাষ করে নিঃস্ব হয়েছিল। ঠিক তেমনি পশ্চিমাদের স্বস্তা পোশাক সরবরাহ করতে গিয়ে এই দেশীয় পোশাক কারখানা মালিকরা শুধু নিজেরা নিঃস্ব হচ্ছে না বরং দেশের জনগণকে চড়ামূল্য দিতে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমা ব্র্যান্ডের সাথে দড়কষাকষিতে পরাজিত পোশাক মালিকদের অনেকে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য শ্রমিকদের শোষণ, সরকারি সুবিধা (নগদ প্রণোদনা, বন্ডেড ওয়ারহাউসের অপব্যাবহার, কর ফাঁকি ইত্যাদি) লুটপাট কিংবা ঋণ খেলাপীর মত কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এইভাবে পশ্চিমাদের চাহিদা নির্ভর তৈরি পোশাক শিল্প দেশের জন্য একটি অভিশাপ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। পোশাক শিল্পের রফতানির আয় আমাদের দেশে কিছু বড় বড় পোশাক কারখানা প্রতিষ্ঠিত হলেও এই কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য জনগণকে জ্বালানীর ভর্তুকী, নগদ প্রণোদনা, স্বল্প মূল্যে বা বিনা মূল্যে শ্রম প্রদানসহ নানা রূপে এর মূল্য দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় এই ধরণের বিদেশ নির্ভর শিল্পায়ন দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি করছে। সাম্প্রতি, আমেরিকা পাল্টা শুল্ক কমাতে বাংলাদেশের সাথে যে গোপন ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি করেছে তার মধ্যে নিরাপত্তা এবং জ্বালানীর মত অতিসংবেদনশীল বিষয়ও অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি চাচ্ছে, সেখানে তাদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় আছে: জ্বালানি উপদেষ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৫, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।  

বিশ্বায়নের নামে ১০০% রফতানি নির্ভর শিল্পায়ন একটি নব্যউপনিবেশবাদী শোষনের মডেল যার মাধ্যমে উপনিবেশবাদীরা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করে স্বল্প মূল্যে পণ্য উৎপাদন করে Surplus Value তাদের দেশে স্থানান্তর করে। মুসলিমরা এই ধরনের নতজানু শিল্পায়নের মডেলের অংশ হতে পারে না। কারণ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “এবং কিছুতেই আল্লাহ্‌ মু’মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বকে মেনে নিবেন না” [আন-নিসা: ১৪১]। খিলাফত রাষ্ট্রে শুধুমাত্র কোন বিশেষ বিদেশী ক্রেতার চাহিদা পূরণের জন্য রাষ্ট্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করবে না বরং রাষ্ট্র জনগণের জীবন-জীবিকা স্বাচ্ছন্দ্যময় করার উপযোগী শিল্প কারখানা স্থাপনকে উৎসাহিত করবে। খলিফা উৎপাদন মূল্যে শিল্প কারখানাগুলোকে জ্বালানী সরবরাহ করবে, ট্রেড লাইসেন্স সহ জুলুমমূলক পুঁজিবাদী কর ব্যবস্থা (আয়কর এবং ভ্যাট) বাতিল করবে। তাই খিলাফত রাষ্ট্রে পণ্যের উৎপাদন ব্যায় স্বাভাবিকভাবে অন্য যেকোন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের তুলনায় হবে ন্যায্য। তাই খিলাফত রাষ্ট্রের কারখানাগুলো Low Value পোশাক উৎপাদন না করে High Value তথ্য প্রযুক্ত পণ্য, সামরিক সরঞ্জাম, মটর গাড়ীসহ শিল্প পণ্য উৎপাদন করবে যার স্থানীয় চাহিদা ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে রয়েছে বিশেষ চাহিদা। এই প্রক্রিয়াই খিলাফত রাষ্ট্র আর্ন্তজাতিক বাজারে চালকের আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো খিলাফতের সাথে বাণিজ্যের পথ অনুসন্ধান করবে। “তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি এটাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করতে পারেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট” [আল-ফাতহ: ২৮]

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম    

Previous Post Next Post