নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: জেন-জি বিপ্লবের পরবর্তী টার্গেট কে

 


খবরঃ 

নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একের পর এক যুব-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন রাজনৈতিক পালাবদল ঘটিয়েছে। প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব বিদ্রোহকে একসূত্রে গেঁথে রেখেছে একটি প্রজন্ম—যারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভঙ্গুর প্রতিশ্রুতি আর অচল ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।গত সপ্তাহেই নেপালে হাজারো তরুণ-তরুণী রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাস্তায় নামে।প্রকৃত ক্ষোভ জমে ছিল বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে ঘিরে।প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হন।এর আগের বছর, ২০২৪ সালে, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতের উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন।২০২২ সালে, শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে।তরুণেরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলন শুরু করলে জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট   রাজাপক্ষ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুমেলা সেন মন্তব্য করেন, ‘এই প্রজন্মের স্লোগানগুলো শুধু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং ন্যায়বিচার, কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। প্রশ্ন এখন একটাই—দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশে পরবর্তী বিদ্রোহ ফেটে পড়বে? (https://www.ittefaq.com.bd/752338/নেপাল-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-জেন-জি-বিপ্লবের


মন্তব্যঃ 

নেপাল ,বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা সহ দেশে দেশে জেন জিরা যে বেকারত্ব, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দমনমূলক অভিজাত শ্রেণী, তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, এবং ধনী-গরীবের বৈষম্যের বিরুদ্ধে ফুসে উঠছে এবং একের পর এক দুর্নীতিগ্রস্ত যালিম শাসকদের পতন ঘটাচ্ছে তা  দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য ব্যাপক প্রশংসা ও কৃতিত্বের দাবীদার। জেন-জির মধ্যে একটা বাস্তবিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং এর ফলে দেশে দেশে গণঅভ্যুত্থান ছড়িয়ে পড়ছে যা জনগণের অধিকার হরণকারী নিপীড়ক ও যালিম শাসকদের ক্ষমতার মসনদ কাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় ও বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশগুলোতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন গণঅভ্যুত্থানগুলোর প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য করলে যে বিষয়টি প্রতীয়মান হচ্ছে সেটা হল এই আন্দোলনগুলো কেবলমাত্র শাসকগোষ্ঠীর চেহারা পরিবর্তনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অধিকাংশ আন্দোলনকারীদের দাবি হচ্ছে তারা শাসকের পতন ঘটাবে এবং সুষ্টু নির্বাচনের জন্য চাপ দিবে এবং সৎ শাসককে ক্ষমতায় আনবে যিনি জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু এসব আন্দোলনকারীরা যে জিনিসটা বারবার বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে সেটা হল বেকারত্ব, দুর্নীতি, ও বৈষম্য সহ সকল ধরনের যুলুম-নিপীড়নের প্রকৃত উৎস ব্যক্তি শাসকে নয় বরং ঔপনিবেশিক সমর্থিত বর্তমান সেকুলার পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মধ্যে প্রোথিত। কারণ পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আইন প্রণয়নের সার্বভৌম ক্ষমতা দিয়ে শাসকগোষ্ঠীকে একেকটি দানবে পরিণত করে যারা জনগণের উপর কতৃত্ব স্থাপন, অধিকার হরণ এবং দমন-পীড়নের মাধ্যমে শুধুমাত্র নিজেদের, ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর এবং ঔপনিবেশিক শক্তির স্বার্থ রক্ষার জন্য ক্ষমতা আকড়ে ধরে থাকে।  শাসকদের দুর্নীতি, বৈষম্য ও অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ বিদ্রোহ করলে ঔপনিবেশিক শক্তি শাসকের চেহারা পরিবর্তন করে অন্য শাসককে ক্ষমতায় নিয়ে এসে জনগণের উপর নয়া বৈষম্য ও যুলুম চাপিয়ে দেয়ার পথ সুগম করে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেশে গড়ে ওঠা গণঅভ্যুত্থানগুলোর মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠীর চেহারার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু জনগণের ভাগ্য ও জীবনযাত্রার মৌলিক কোন পরিবর্তন হয় নাই। বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং বৈষম্য সহ সকল ধরণের যুলুম-নিপীড়নের চক্র অব্যাহত রয়েছে কারণ এগুলোর উৎসমূল পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনও প্রচেষ্টা করা হয়নি। 

এমতাবস্থায় সাম্প্রতিক ও বিগত সময়ের গণঅভ্যুত্থান থেকে নেপাল, শ্রীলংকা এবং বিশেষত বাংলাদেশের জেন-জি দের জন্য অতীব জরুরি শিক্ষণীয় বিষয়টি হল কেবল মাত্র অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, দুর্নীতি , বৈষম্য ও শাসক উৎখাতের দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই তা প্রকৃত ফলাফল ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করবে না। পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অটুট রেখে শুধু চেহারা পরিবর্তন করে গত দশকের পর দশক ধরে যেমন পরিবর্তন আসে নাই, তেমনি ভবিষ্যতেও প্রকৃত পরিবর্তন আসবে না। এভাবে প্রকৃত পরিবর্তনের আশা বারবার ব্যর্থ হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত প্রজন্ম তৈরি হবে যার ফলে পরিবর্তনের আরেকটা বসন্ত পেতে বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাই রাষ্ট্রের প্রকৃত ও সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্য রাষ্ট্র সংস্কার ও শাসক পরিবর্তনে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রয়োজন হচ্ছে খোদ পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা। এক্ষেত্রে পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফত ব্যবস্থার রাজনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নই একমাত্র বিকল্প। খিলাফত ব্যবস্থার রাজনৈতিক বন্দোবস্তই হবে ইসলাম, জনগণের স্বার্থ রক্ষা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে ভিত্তি করে যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের জনগণ ও জেন-জি দের আশা-আকাঙ্খা ছিল। খিলাফত ব্যবস্থা ইসলাম ও মুসলিমদের সুরক্ষা ও তাদের আবেগ-অনূভুতির রক্ষাকবচ হবে। ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান, শিক্ষা-স্বাস্থ্য- কর্মসংস্থান, নিরাপত্তাসহ ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করবে। দেশকে বিদেশীদের আধিপত্যমুক্ত স্বাধীন, সার্বভৌম ও নেতৃত্বশীল রাষ্ট্রে পরিণত করবে। এভাবে খিলাফত ব্যবস্থা দেশের জনগণ ও জেন-জি দের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সক্ষম এবং যাবতীয় বৈষম্য ও যুলুম থেকে তাদেরকে  মুক্ত করে রাষ্ট্রের সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। সুতরাং, শুধুমাত্র ঔপনিবেশিক শক্তির দালাল শাসকদের চেহারা পরিবর্তন হয় এমন বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে সীমাবদ্ধ না থেকে জনগণ ও জেন-জি দের চলমান আন্দোলনকে সামগ্রিকভাবে পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের সমর্থিত পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে ইসলামী জীবনাদর্শ তথা ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দিকে পরিচালিত করতে হবে। একমাত্র নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হবে এবং যুলুম ও বৈষম্যের চির অবসান হবে ইনশাল্লাহ। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “...অতপর যুলুমের শাসনের অবসান হবে; তারপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফত - নবুয়তের আদলে” (মুসনাদে আহমদ)। 

    -    কাজী তাহসিন রশীদ


Previous Post Next Post