ভোটের অঙ্কে নতুন ভাবনা



খবর:

গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দিকে হাঁটছে দেশ। ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা হিসাবনিকাশ ও সমীকরণ চলছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। এমন এক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফল রাজনীতির গতিপথে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। ডাকসু নির্বাচনের ফল আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে কতখানি প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। ছয় বছর পর সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনের ফলাফলে বড় চমক দেখিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। ডাকসুর ২৮টি পদের মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২৩টি পদে বিজয়ী হয়েছে এই জোটের প্রার্থীরা। যেখানে অতীতে কখনো ডাকসু নির্বাচনে প্রকাশ্যে প্যানেল দিতে পারেনি, কেন্দ্রীয় সংসদের কোনো পদে কখনো জয় পায়নি, সেখানে শিবিরের এমন ভূমিধস জয় রাজনীতিতে রীতিমতো চমক নিয়ে এসেছে। অন্যদিকে বড় দল হিসেবে বিএনপি যেখানে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া, সেখানে দলটির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভরাডুবি হয়েছে ডাকসু নির্বাচনে। ২৮টি পদের একটিতেও জয় পায়নি সংগঠনটি। (https://www.ajkerpatrika.com/education/ajp0goczsck8m

মন্তব্যঃ 

এই দেশের রাজনৈতিক সমীকরণে বিশ্লেষকরা সবসময় আওয়ামী-বিএনপিগোষ্ঠীকে রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করতেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ই আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশের সেকুলার রাজনীতির ফ্লাগশিপ আওয়ামী লীগের পতনের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছিল বিএনপিগোষ্ঠী পতিত আওয়ামী রাজনৈতিক শুন্যস্থান পূরণ করবে। কিন্তু, তরুণ প্রজন্মের যে আকাঙ্ক্ষা রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের স্বার্থ, ইসলামের স্বার্থ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে ভিত্তি করে তাদের রাজনীতি পরিচালনা করবে, তা এসব ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ। কারণ তাদের রাজনীতির ভিত্তি হল নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়া, গুটিকয়েক পুঁজিপতি এবং উপনিবেশিক শক্তিসমূহের স্বার্থ রক্ষাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। নতুন এবং পুরাতন দলের দেশব্যাপী ব্যাপক চাদাবাজি, এস আলম কিংবা বসুন্ধরা গ্রুপের সম্পদের পাহারা দেয়া, পশ্চিমাদের সুরে ইসলামের রাজনীতিকে উগ্রবাদ বলে আখ্যা দেয়া, মার্কিন এম্ব্যাসিমুখী রাজনীতি প্রত্যক্ষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে উপলব্ধি হয়েছে যে, নৌকা, দাঁড়িপাল্লা, শাপলা কিংবা ধানের শীষ, সব সাপের একই বিষ। রাজনীতিতে এই পরিবর্তন শুধু বাংলাদেশের বাস্তবতা নয় বরং এটা এখন বৈশ্বয়িক ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম আর ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী রাজনৈতিক দল, তাদের আবেগ নির্ভর স্বস্তা রাজনৈতিক স্লোগান এবং নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এনং নেপালের সরকার পতনের আন্দোলনেও একই রকম বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। 

দেশে প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকদের বাইরে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী এখন রাজনীতির বড় ফ্যাক্টর, যারা শুধু জালিম শাসক নয়, জুলুমের এই ব্যবস্থারও পরিবর্তন চায়। তাই আপাতদৃষ্টিতে, তারা আওয়ামী-বিএনপি'র বিকল্প ভেবে তৃতীয় কাউকে নির্বাচিত করলেও, যখন তাদেরকে দেখবে জনগণের স্বার্থ, তার বিশ্বাস-আবেগ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে, তখন সাথে সাথেই তারা তাদেরকেও ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে।

তাই দেশের সচেতন জনগণের উচিত, কারো মুখরোচক সস্তা স্লোগান দ্বারা প্রতারিত না হয়ে তাদের রাজনৈতিক প্রকল্প পর্যালোচনা করা।  তারা কি পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপশনের সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষ-পুজিবাদী শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা বলছে কিনা এবং তদস্থলে ইসলামী সংবিধান ও খিলাফতের শাসন ব্যবস্থার প্রকল্পকে উপস্থাপন করছে কিনা? উপনিবেশবাদীদের আধিপত্য থেকে রক্ষা করতে তাদের রোডম্যাপ কি? দেশের সম্পদ বেশি-বিদেশি পুজিপতিদের কবল থেকে মুক্ত করে তা জনগণের কল্যাণে ব্যয় করার ক্ষেত্রে তাদের নীতি ও পরিকল্পনা কি? তারা কি ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থকে কাফির-উপনিবেশবাদীদের থেকে প্রাধান্য দিবে কিনা? জনগণের স্বার্থকে অর্থাৎ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা এসব মৌলিক চাহিদাকে তারা কি কাফির উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ থেকে প্রাধান্য দিবে কিনা? নতুবা বার বার অনেক ত্যাগ স্বীকার করার পরেও হতাশায় পড়তে হবে। বিপ্লবের এক বছরে বাংলাদেশিদের আশা হতাশায় পরিণত, ১৬ আগস্ট ২০২৫, সমকাল। জনগণের পরিবর্তনের আকাঙ্খা জালিম শাসক-আত্নত্যাগ-অভ্যুত্থান-নব্যজালিমের দুষ্ট চক্রে হারিয়ে যেতে থাকবে। তরুণ প্রজন্ম আর কত বার এই দুষ্ট চক্রে প্রতারিত হবে? জনগণের পরিবর্তনের আকাঙ্খা পূরণ করতে হলে উপনিবেশবাদীদের জুলুমের শৃঙ্খল উপনিবেশবাদীদের ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা প্রয়োজন। ইসলাম হচ্ছে সেই বিশ্বব্যবস্থা যার মাধ্যমে উপনিবেশবাদীদের জুলুমের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

“আলিফ লাম রা। এই কিতাব আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানব জাতিকে বের করে আনতে পার অন্ধকার হতে আলোর দিকে;..“ [সূরা  ইবরাহীম, আয়াত ১]  

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম

Previous Post Next Post