খবরঃ
রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাফার জোনে বাংলাদেশি সেনা পাঠাতে জাতিসংঘের প্রস্তাব পেলে সম্মতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতিসংঘ। আশা করি তাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হবে। যুদ্ধবিরতি হলে জাতিসংঘ নিশ্চয়ই কোনও রোল নেবে। শান্তিরক্ষায় আমাদের যে অভিজ্ঞতা আছে, সেখানে যদি এমন কোনও পরিস্থিতি হয় আমরা তো নিশ্চয়ই অংশ নিতে চাইবো।বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি। (https://www.banglatribune.com/national/914796/পরিস্থিতি-শান্ত-হলে-সবাই-ফেরত-আসতে-পারবেন)
মন্তব্যঃ
যখন গণহত্যার স্বীকার, ক্ষুধার্ত, অবরুদ্ধ গাজাবাসীর সাহায্যের দরকার, তখন শাসকেরা উপনিবেশবাদীদের বেঁধে দেয়া সীমান্তের পবিত্রতা লঙ্ঘিত হওয়ার অজুহাত দাঁড় করিয়েছিল। যখন হিন্দুত্ববাদী ভারত সমগ্র ভারতে ও কাশ্মীরে মুসলিমদেরকে হত্যা করেছে, মুসলিম নারীদের অসম্মান করেছে তখনও শাসকেরা একই অজুহাত দাঁড় করিয়েছিল। যখন মায়ানমারের সামরিক জান্তা ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করেছে, তাদের দেহগুলোকে পুড়িয়ে দিয়েছে তখনও আমাদের শাসকেরা একই অজুহাত দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু আজকে উপনিবেশবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন তার ভূরাজনৈতিক স্বার্থে রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাফার জোনে সেনাবাহিনী পাঠানোর দাবি জানিয়েছে তখন এসব শাসকেরা তথাকথিত “পবিত্র” সীমান্তের অজুহাতকে অতিক্রম করে তাতে সাড়া দিয়েছে!
এ থেকে প্রমাণিত হয়, এসব শাসকগোষ্ঠীর নিকট তাদের উপনিবেশবাদী প্রভুদের স্বার্থ ও সুবিধা হচ্ছে স্থায়ী(Fixed) বিষয় এবং এই স্বার্থ ও সুবিধা আদায়কে কেন্দ্র করে এখানে শাসকদের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং শত্রু-মিত্র নির্ধারিত হয়। তাই কিছুদিন পূর্বেও ব্রিটিশ দালাল হাসিনা বৃটেনের স্বার্থে আরেক ব্রিটিশ দালাল মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে বন্ধু বানিয়েছিল, আর এখন অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন স্বার্থে মার্কিন প্রক্সি আরাকান আর্মিকে বন্ধু বানিয়েছে। কিন্তু এই শাসকেরা ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে কখনোই মাথা ঘামায় না এবং আমাদের সামরিক বাহিনীকে কাফির ঔপনিবেশিকদের শৃঙ্খল থেকে উম্মাহকে মুক্ত করার কাজে কখনোই প্রেরণ করে না। তারা মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক নয় বরং বিশ্বাসঘাতক।
যতক্ষণ না আমরা উপনিবেশবাদীদের প্রতি দাসসুলভ শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের ধর্মনিরপেক্ষ শাসনের হাত থেকে পরিত্রাণ পাই, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের সামরিক বাহিনীকে ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা এবং ঔপনিবেশিক শক্তির প্রভাব থেকে উম্মাহকে মুক্ত করার কাজে ব্যবহার করতে সক্ষম হবো না। একমাত্র ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ন্যায়নিষ্ঠ খিলাফত রাষ্ট্রের শাসকগণই পারবেন ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা করতে এবং মুসলিম সেনাবাহিনীকে ঔপনিবেশিক কাফির শত্রুদের বিরুদ্ধে শক্তিশালীভাবে ব্যবহার করতে। ইসলামী রাজনীতির মূল দর্শন হল ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা করা। খিলাফত রাষ্ট্রে শত্রু ও মিত্র এবং তাদের প্রতি আচরণও শরীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত। ফিলিস্তিনসহ বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত দেশ আমেরিকা হচ্ছে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী মুসলিমদের শত্রু রাষ্ট্র। যার ফলে আমেরিকার সাথে মুসলিম দেশের সম্পর্ক অবশ্যই যুদ্ধের সম্পর্ক। আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খিলাফতের পররাষ্ট্রনীতি হবে যুদ্ধভিত্তিক নীতি। তাই আমেরিকার মত যুদ্ধরত কাফির শত্রু রাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা করা এবং তার ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জ্বালানি হিসেবে আমাদের মুসলিম সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা ও সেখান থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের চিন্তা ইসলামী শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক। বরং খিলাফত রাষ্ট্র তার সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে শক্তিশালী করবে যাতে কাফির- ঔপনিবেশিকদের হৃদয়ে ভীতি জাগ্রত হয়। ফিলিস্তিন সহ অন্যান্য দখলকৃত ভূমিকে মুক্ত করার জন্য মুসলিম সেনাবাহিনী প্রেরণ করা সহ ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও শাসনের অধীনে সকল মানব-সমাজকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে খিলাফত রাষ্ট্র জিহাদের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের কাছে ইসলামী দাওয়াহ্ পৌঁছে দেবে। এক্ষেত্রে খিলাফত রাষ্ট্র আমেরিকার মত ঔপনিবেশিক শত্রুদের সাথে আপস করবে না কিংবা তাদের কাছে মাথা নত করবে না এবং এটি আবারও একটি অতুলনীয় পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন: “তিনিই তাঁর রাসূলকে দিক–নির্দেশনা ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে এই দ্বীন অন্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী হয়। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট” [সূরা আল-ফাতহ: ২৮]।
- কাজী তাহসিন রশীদ