আইএমএফের এক-দেড় বিলিয়ন ডলার আনতেই জান বের হয়





খবরঃ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের জন্য বছরে কয়েক হাজার কোটি ডলার দরকার হলেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাগুলো থেকে প্রত্যাশিত অর্থ আসছে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সামান্য অর্থ আনতেও দীর্ঘ সময় ধরে কঠিন আলোচনার মুখে পড়তে হয় বাংলাদেশকে।… অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘হিসাব করা হয়, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার দরকার। অথচ আইএমএফ থেকে এক-দেড় বিলিয়ন আনতেই আমাদের জান বের হয়ে যায়। এক-দেড় বছর ধরে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের জন্য নেগোসিয়েশন করতে হয়। এত কষ্ট করে সামান্য অর্থ পাওয়া যায়। (https://www.kalerkantho.com/print-edition/industry-business/2025/09/08/1574695)

মন্তব্যঃ

স্রষ্টা বিবর্জিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি যেখানে সীমাহীন ‘ভোগবাদ’, সেখানে কার্বন নিঃসরণ হবে, বর্জ্য পদার্থে পরিবেশ ধ্বংস হবে, এটাই স্বাভাবিক। এই ‘ভোগবাদ’ হল এমন একটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা, যেখানে ক্রমাগত পন্য ও সেবা ক্রয় করা ও ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হয় এবং বিশ্বাস করা হয় যে, এটি সুখ ও সাফল্যের চাবিকাঠি। আর আমরা জানি, বর্তমানে ভোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পন্য, যেগুলোর আবার প্রতিনিয়ত আপডেট ভার্সন বের হচ্ছে, আর মানুষকে তা ব্যপকভাবে ক্রয় করতে উৎসাহীত করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ দূষণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য (E-waste)। পরিত্যক্ত ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্পিউটার, মনিটর, প্রিন্টার, ফটোকপিয়ার, টেলিভিশন সেট, নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক খেলনা, ডিজিটাল ক্যামেরা, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ইত্যাদি ই-বর্জ্যের অন্তর্ভুক্ত৷ অর্থাৎ একদিকে সেগুলো উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, অন্যদিকে সেগুলোর বর্জ্যে পরিবেশ দূষন হচ্ছে। এগুলোর বর্জ্য দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের একটা স্তুপ তৈরি হয়েছে, যেটার আয়তন ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনের সমন্বিত আয়তনের চেয়েও বেশি। যেটা ‘গ্রেট স্পেসিফিক গারবেজ প্যাচ’ নামে পরিচিত।


পরিতাপের বিষয় হচ্ছে পরিবেশজনিত ক্ষতিতে যাদের অবদান যত সামান্য, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তাদের অবস্থান তত উপরের দিকে। গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বড় বড় তথাকথিত উন্নত দেশগুলি বিশেষত আমেরিকা, চায়না এবং ইউরোপ তাদের ভোগবাদী অর্থনীতির স্বার্থে কয়লাভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার করে আসছে এবং পরিবেশে কার্বন নির্গত করছে। climatetrade.com এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর ৩০ গিগা টন কার্বন নির্গত হচ্ছে পৃথিবীতে। মোট কার্বনের ৩০% নির্গত করে চীন, আমেরিকা করে ১৪%, বাকি ৫৬% এর জন্য দায়ী ইউরোপ, রাশিয়া ও জাপানসহ ভারত। অথচ ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল, এই ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যায়ক্রমে হন্ডুরাস, মিয়ানমার ও হাইতি৷ এই সুযোগে আবার পশ্চিমা উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আই.এম.এফ বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় তার RTS (Resilience and sustainability trust) এর আওতায় ঋনসহায়তার নামে ঋনের ফাঁদ ফেলে তার অন্যায় শর্ত সমূহ চাপিয়ে দেয়। তারপর আবার ঋনও ঠিকমতো দেয় না। ৩০ বিলিয়নের জায়গায় ১-২ বিলিয়ন দেয়, যা অর্থ উপদেষ্টার কথায় উঠে এসেছে। 


তাই মানুষকে ভোগবাদে প্ররোচনা দানকারী পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বাস্তবায়িত রেখে কার্বন নিঃসরণ বা দূষন বন্ধ হবে না, বরং তা ধীরে ধীরে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। এই ধ্বংসের সুযোগে পশ্চিমারা আবার ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোতে ঋনের ফাঁদ পাতবে। এই চক্র চলতেই থাকবে। তাই এই ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন জরুরী। এর পরিবর্তে এমন ব্যবস্থা লাগবে, যা পরিবেশকে আমানত মনে করে। এই ব্যবস্থাটি হলো সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ইসলামী ব্যাবস্থা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেকটি নিয়ামতের ব্যাপারে হিসাব নেবেন” (তাকাসুরঃ৮)। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে পরিবেশের উপাদান গুলোর সঠিক ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করতে শেখায় এবং অপচয় না করার নির্দেশ দেয়। যেমন আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি যৌক্তিকতা ছাড়া একটি লটকন গাছও কাটবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে পাঠাবেন”। ইসলামী বিচারব্যবস্থার ‘কাজী-উল-মুহতাসিব’ বিভাগ পরিবেশের নূন্যতম ক্ষতিসাধনকারীদের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নিবেন।


    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post