মার্কিন এফবিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে এটিইউ প্রধানের বৈঠক



খবরঃ 

সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ঢাকায় এন্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন— সুসান ফিনবি (স্টাফ-অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্পেশালিস্ট, এফবিআই), রবার্ট জে ক্যামেরন (অ্যাসিস্ট্যান্ট লিগ্যাল অ্যাটাশে, এফবিআই, ঢাকা) এবং ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পুলিশ লিয়াজোঁ অফিসার মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম। বৈঠকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদ-সংক্রান্ত পরিস্থিতি, উগ্রবাদের বৈশ্বিক প্রবণতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাসহ নানামুখী বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় মার্কিন প্রতিনিধি দল এটিইউ-এর চলমান কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতে ঘনিষ্ঠভাবে একযোগে কাজ করার আগ্রহ জানায়। এটিইউ-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। উভয় পক্ষই দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ভিত্তি আরও জোরদার করতে এবং তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। (https://www.dhakatimes24.com/2025/09/22/393903)


মন্তব্যঃ 

যেহেতু এটিইউ(Anti Terrorism Unit) এবং সিটিটিসির(Counter Terrorism & Transnational Crime) মত দুর্বৃত্ত বাহিনীগুলো ছিল শেখ হাসিনার শাসনামলে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও তথাকথিত জঙ্গি নাটক তৈরির মূল হাতিয়ার, তাই যালিম হাসিনার পতনের পর দেশের জনগণ প্রত্যাশা করেছিল যে এই ধরনের অপরাধী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশ থেকে সমূলে বিলুপ্ত হবে এবং দেশে আর  তথাকথিত “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের” নামে “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”-এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।  কিন্তু জনগণের এই প্রত্যাশাকে ভুল প্রমাণিত করে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরেই সিটিটিসির এবং সম্প্রতি এটিইউ’র সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইসলামবিদ্বেষী মার্কিন সংস্থা এফবিআইকে(FBI) আমন্ত্রণ জানিয়ে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার সাথে বেইমানী করেছে। অর্থাৎ, অন্তর্বর্তী সরকারের মার্কিন দালালগোষ্ঠীও পতিত হাসিনার মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের” নামে “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই ঘটনা থেকে আরও প্রমাণিত হল যে,  হাসিনা সরকারের পতন হলেও দেশের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ও তাদের ‘ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এই নীতির কোনও পরিবর্তন হয় নি। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (IPS)-এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলা করা এবং এ অঞ্চলে খিলাফতের উত্থান ঠেকানো।  খিলাফতের উত্থান ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। আর অন্তর্বর্তী সরকারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতি স্বীকার করে পতিত হাসিনার মত খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিকে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ আখ্যা দিয়ে সেটাকে দমন করাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছে। ফলশ্রুতিতে অন্তর্বর্তী সরকার কুখ্যাত মার্কিন প্রতিষ্ঠান এফবিআইকে(FBI) আমন্ত্রণ জানিয়ে এটিইউ ও সিটিটিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেস্টার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করছে এবং খুশি করছে। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত করতে সরকার সরকার পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টরদেরকে মার্কিনীদের দ্বারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। খিলাফতের দাওয়া বহনকারীদেরকে গ্রেফতার, হয়রানি ও জেল-জুলুমের সম্মুখীন করা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া দেশের তথাকথিত ইসলামপন্থী ও অন্যতম ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপি ইসলামী ব্যবস্থা-খিলাফতের উত্থানকে মোকাবেলা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকট প্রতিজ্ঞা করেছে। সরকার ও এসব ধর্মনিরেপেক্ষ রাজনৈতিক দলের কেউই ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে যে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান করেছিল সে ব্যাপারে যেমন কোনও শিক্ষাও গ্রহণ করছে না তেমনি তারা নিজেরাও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পদানত সৈনিক হওয়ার কারণে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র ক্রোধকেও পরোয়া করছে না। আল্লাহ্‌ ﷻ বলেন, “আর কখনও মনে করো না যে, আল্লাহ্‌ যালিমদের (অপরাধীদের) কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বেখবর। তিনি তাদেরকে ঐদিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চোখগুলো [ভয়ে] বিস্ফোরিত হয়ে যাবে” [সূরা ইব্রাহিমঃ ৪২]।

সুতরাং, ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে ইসলামকে মাইনাস করে মার্কিন অনুগত দালালগোষ্ঠী ও রাজনীতিবিদেরা যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত জনগণের উপর জোড়পূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার চেস্টা করছে সেটার মাধ্যমে কখনোই ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষিত হবে না। যতদিন পশ্চিমা সমর্থিত এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকে থাকবে ততদিন পশ্চিমাদের ওয়ার অন টেররের নামে “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” নীতি    অব্যাহত থাকবে এবং ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ উপেক্ষিতই থাকবে।গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রেখে শুধুমাত্র শাসকের চেহারা পরিবর্তন করে কিছু কসমেটিক পরিবর্তন করলেই রাষ্ট্রের গুণগত কোন পরিবর্তন আসবে না। এদেশের ৯০% জনগণ যেহেতু ইসলামপ্রিয়, সেহেতু এদেশের মানুষের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হতে হবে ইসলামের ভিত্তিতে। কেবলমাত্র মুসলিম উম্মাহর গৌরবোজ্জ্বল দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক বন্দোবস্তই ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। কারণ খিলাফত ব্যবস্থা হচ্ছে এমন ব্যবস্থা যা মুসলিমদের আক্বীদা ও আবেগ-অনূভূতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যা এই আক্বীদা ও আবেগ-অনুভুতির সুরক্ষা দিবে। খিলাফত রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের অধীনস্ত পুলিশ বাহিনীকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোন ঔপনিবেশিক শক্তির পরিচালিত যুদ্ধের হাতিয়ারে পরিণত করবে না। বরং খিলাফত রাষ্ট্রে পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব হল জনগণের জান-মালের নিরপত্তা বিধান এবং যুদ্ধরত, সম্ভাব্য যুদ্ধকামী কাফির ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদেরকে নজরদারির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা করা। কুরআন–সুন্নাহ মোতাবেক হিযবুত তাহরীর প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ““আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের আওতাভুক্ত (সমাজে) নিরাপত্তা বিধানের ৰেত্রে প্রধান হুমকি হিসেবে যেসব বিষয়াদি রয়েছে তা হলো: ধর্মত্যাগ, বিদ্রোহ, ডাকাতি, মানুষের সম্পদের উপর আক্রমণ, মানুষের জীবন ও সম্মানের উপর আক্রমণ, এবং যুদ্ধরত কিংবা সম্ভাব্য যুদ্ধকামী কাফিরদের পক্ষে যেসব ব্যক্তি গোয়েন্দাগিরি করছে বলে সন্দেহজনক নাগরিকদের নজরদারি করা।”  

    -    কাজী তাহসিন রশীদ 


Previous Post Next Post