আদানির লুটপাট বহাল রাখতে বন্ধ পটুয়াখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র



খবরঃ 

কয়লা আমদানি জটিলতায় থমকে আছে পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পরীক্ষামূলকভাবে চালুর ৮ মাস অতিবাহিত হলেও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু না করায় রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকারও বেশি। ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানি করে লুণ্ঠন ব্যবস্থা বহাল রাখতে পটুয়াখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্রটিসহ দেশের প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগানো হয়নি বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। আমার দেশকে তিনি বলেন, শুধু পটুয়াখালীর ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি চালু করলে আদানির কাছ থেকে আর বিদ্যুৎ এনে দেশের কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হতো না। এখানে সুবিধাভোগী শ্রেণির আর্থিক সুবিধা জড়িত থাকায় তারা কোনোভাবেই দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে চায় না। আগের লুণ্ঠনকারী সরকার যে পদ্ধতি অবলম্বন করত, এই সরকারও সেখান থেকে বের হতে পারেনি বলে মনে করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম। (https://www.dailyamardesh.com/amar-desh-special/amdt7s1zffaod)

মন্তব্যঃ 

যেখানে দেশে ৩১,৫০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে চাহিদা কখনোই ১৮০০০ মেগাওয়াটের বেশি নয় সেখানে আদানি পাওয়ারের মাত্র ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেশের বিদ্যুৎ খাতে বাড়তি কোন কিছুই সংযোজন করে না অর্থাৎ, এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কোনই প্রয়োজন নেই। অথচ বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ভারতকে খুশি করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদীর মদদপুষ্ট আদানি গ্রুপের সাথে এই অসম ও অস্বাভাবিক মূল্যে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিটি করেছিল। আর ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে  ক্ষমতার আরোহণ করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে সুযোগ ছিল আদানি গ্রুপের সাথে এই অসম চুক্তিটি পুনঃমুল্যায়ন করে সেটি বাতিল করা। এই চুক্তি বাতিল করলে উচ্চমূল্যের কয়লা ক্রয়(প্রতি টন ৪০০ ডলার), অস্বাভাবিক ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ(প্রতি বছর এক লাখ ২৬ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা) এবং ৪ গুণ বেশি দামে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ক্রয়ের যাতাকল থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারতাম। আর আদানি গ্রুপের সাথে পতিত হাসিনার কৃত এই চুক্তি বাতিলের ভয় দেখিয়ে আমরা হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য ভারতের উপর চাপ প্রয়োগ করার রাজনৈতিক কৌশল(Political Maneuvering ) গ্রহণ করতে পারতাম। সীমান্ত সন্ত্রাস ও পানি আগ্রাসনসহ ভারতের অন্যান্য আধিপত্যবাদী নীতি ও কার্যক্রমের কৈফিয়ত চাইতে পারতাম। ভারতকে শত্রুরাষ্ট্র ঘোষণা ও তার এম্বাসি বন্ধের হুমকি দিতে পারতাম। আদানির সাথে এই অসম বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করলে বাংলাদেশ নয় বরং ভারতই কৌশলগত ক্ষতির মুখে পড়ত এবং তার ধৃষ্টতার উপযুক্ত জবাব পেত। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, পতিত হাসিনা সরকারের মতই অন্তর্বর্তী সরকারও মুখে ভারত বিরোধিতার কথা বললেও কার্যতভাবে ভারত তোষণ নীতি ও ভারতের কাছে নির্লজ্জ আত্বসমর্পণের নীতি এখনও বহাল রেখেছে। উপযুক্ত অডিট ও চুক্তির অন্যায্য শর্ত পুনঃমূল্যায়ন না করেই ভারতকে খুশি করতে অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে আদানির সমূদয় অর্থ পরিশোধ করেছে।ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট সহ ভারতীয় স্বার্থের অনুকূলের কৃত সকল চুক্তি এখনো বহাল রয়েছে। ইলিশ ও আম উপঢৌকন পাঠানোর মাধ্যমে ভারতের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের স্বার্থে  পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। যেহেতু ভারত এই অঞ্চলে মার্কিনীদের আঞ্চলিক চৌকিদার, তাই মার্কিন প্রক্সি অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের প্রতি তাদের নতজানুতার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে আমাদের কৌশলগত সুবিধাকে কাজে লাগাচ্ছে না এবং আমাদের দেশের অর্থনীতি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক কৌশলও(Political Maneuvering ) ব্যবহার করছে না। 

কাফির-মুশরিকদের দালাল ও তাদের প্রতি নতজানু শাসকগোষ্ঠীর হাতে দেশের অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত নয়। তাদের ক্রীতদাসতূল্য নীতি ও আচরণ কখনোই আমাদের শত্রুরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের কৌশলগত সুবিধা ও সক্ষমতাকে ব্যবহার করতে দিবে না। একমাত্র ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত  স্বাধীন ও শক্তিশালী খিলাফত সরকারই পারবে আমাদের ভুখন্ড সহ এ অঞ্চলকে কাফির-মুশরিক শক্তিগুলোর আগ্রাসন ও আধিপত্য থেকে মুক্ত করতে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মুশরিক এই ভারত রাষ্ট্রকে মুসলিমদের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে ঘোষনা দিয়েছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গী মাথায় রেখেই খিলাফত সরকার তার সাথে সামরিক, অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক ও অন্যান্য দ্বি-পাক্ষীক সম্পর্ক বিবেচনা করবে। তাই খিলাফত সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের মত শত্রু রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পাদিত সকল প্রকার চুক্তি ও সন্ধিগুলো বাতিল করবে যাতে করে আমাদের উপর তাদের কোন প্রকার কৌশলগত সুবিধা না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়। খিলাফত সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ভারতের সম্পৃক্ততার প্রকৃত সত্য উন্মোচন এবং এই দুষ্কর্মে পতিত হাসিনা সহ তার সহযোগীদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। খিলাফত সরকার ভারতের আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক শিকারে পরিণত হওয়ায় পরিবর্তে এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে যাতে এটি বিভিন্ন পরিস্থিতে উদ্ভুত সুযোগের সদব্যবহার করতে পারে এবং ভারতের উপর ইসলামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগাতে পারে। সর্বোপরি ভারতকে ইসলামী শাসনের অধীনে ফিরিয়ে আনার জন্য আসন্ন খিলাফত সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যে  ভারত বিজয়ের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে। রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,  “অবশ্যই তোমাদের একটি দল হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ্‌ তাদের বিজয় দান করবেন। তারা হিন্দুস্তানের রাজাদের শিকল দিয়ে বেঁধে টেনে আনবে। আল্লাহ্‌ সেই মুজাহিদদের সকলকে ক্ষমা করে দেবেন।” (নাইম বিন হাম্মাদ, আল ফিতান গ্রন্থে আবু হুরায়রা হতে বর্ণণা করেছেন)। 

    -    কাজী তাহসিন রশীদ


Previous Post Next Post