রাজবাড়ীতে মাজারে হামলা, কবর থেকে মৃতদেহ তুলে আগুনে পোড়ানোর অভিযোগ



খবর:

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে 'তৌহিদি জনতা' পরিচয়ে নুরুল হক ওরফে 'নুরাল পাগলা' এর কবর, বাড়ি ও দরবার শরিফে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি মরদেহ কবর থেকে তুলে মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা।শুক্রবার দুপুরের পর হামলার এই ঘটনায় আহতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় পুলিশ নিশ্চিত করেছে। (https://www.bbc.com/bengali/articles/c98d1jvrq4do

মন্তব্য:

নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করা নুরুল হকের মৃতদেহকে পবিত্র কাবা শরিফের আদলে উচু ঘর নির্মান করে সেখানে দাফন করে তার অনুসারীরা। পরবর্তীতে সে ঘর ভেঙে ফেলে তার লাশ পুড়িয়ে দেয় সাধারন জনতা, ভাংচুর করে তার মাজার। এ ঘটনাকে  মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবিরা এমনভাবে উপস্থাপন করছে যেন  এ ঘটনার জন্য দায়ী ইসলাম ও মুসলিমদের উগ্রতা। কিছুদিন পর পর চলমান রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর অবমাননাকারীদের বাড়িঘর ভাংচুর, হিন্দুদের মূর্তি ভাংচুর, মাজারপন্থী ও মাজারবিরোধীদের মারামারির এই ঘটনাগুলোকে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো ও কিছু বুদ্ধিজীবি  ইসলামকে হেয় করার এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে লুফে নেয়। সত্যি কি এই ঘটনাগুলোর জন্য প্রকৃত দায়ী ইসলাম ও মুসলিমরা?

এর উত্তর পেতে আমাদের দেখা দরকার এই মব কালচার, দাঙ্গা বা জনগণের বিভক্তি ও দ্বন্দ্বের সুত্রপাত কোথায়। ভারতবর্ষের ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায় এই ঘটনাগুলোর সুত্রপাত ইসলামি শাসনামলে নয়। ভারতবর্ষকে ৫০০ বছরেরও অধিক সময় মুসলিমরা ইসলামি শাসনব্যবস্থা দিয়ে  শাসন করেছে। এই দীর্ঘ সময় মুসলিম - মুসলিম দ্বন্দ্বতো দূরে থাক, হিন্দু- মুসলিম দাঙ্গার ঘটনাও ঘটেনি। পুরো সময়টাতেই ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সকল বিশ্বাসের মানুষদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিলো। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে ইসলামের কোন নীতির ফলাফল হিসেবে এই ঘটনাগুলোর সুত্রপাত নয় এবং এই ঘটনাগুলোর জন্য ইসলামকে দায়ী করা মূর্খতা।

এ অঞ্চলে হানাহানি, দাঙ্গা কিংবা মব কালচারের শেকড় পাওয়া যায় ব্রিটিশদের নিয়ে আসা ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়। তাদের নীতি ছিল জনগণকে বিভক্ত করে শাসন করা—যা এখনো সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলেই মানুষ আজ বিভক্ত, একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত। মূলত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দুটি মূলনীতি—“বিশ্বাসের স্বাধীনতা” ও “বাকস্বাধীনতা”—এই অশান্তির জন্য দায়ী।

প্রথমত, বিশ্বাসের স্বাধীনতা: এই নীতির আড়ালে পুঁজিবাদ মূল বিশ্বাসকে বিকৃত করার সুযোগ দেয়। নতুন কোনো বিশ্বাস সৃষ্টি হলেও, তা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের মূল বিশ্বাসে আঘাত করে, তবুও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৯০% মুসলিমের দেশে কাবা শরীফকে অবমাননা করার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নুরুল হকের জানাজা ও দাফনে তার অনুসারীদের বাধা দেওয়া হয়নি। একইভাবে ইসলামকে বিকৃত করা কিছু বিশ্বাস—যেমন মাজারপূজা বা কাদিয়ানী মতবাদ—নিরাপত্তার নামে রক্ষা করা হয়। এতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হয় এবং অবশেষে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মব কালচারের নামে উত্তেজিত জনতার ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তাদের ফায়দা হাসিল করে।

দ্বিতীয়ত, বাকস্বাধীনতা: এই নীতির নামে ভিন্ন ধর্ম বা বিশ্বাসের অনুসারীদের একে অপরের ধর্মে আঘাত করার সুযোগ দেওয়া হয়। ব্রিটিশরা যেমন উপনিবেশ আমলে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়ে শাসন করত, আজও সেই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাদী শাসকেরা বাকস্বাধীনতার কথা বলে বিভেদ উসকে দেয়। এর ফলে দাঙ্গা, মব কালচার ও বিভক্তি টিকে থাকে—যাতে জনগণ কখনো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই শোষণমূলক ব্যবস্থা উৎখাত করতে না পারে।

 আসলে পুঁজিবাদী এই নীতিগুলোর কারণেই পৃথিবীর কোথাও জনগণ ঐক্যবদ্ধ জনশক্তিতে পরিণত হতে পারেনি। তাদের নিজেদের কালো-সাদা বিভেদও এর জীবন্ত প্রমাণ।

তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সকল বিশ্বাসের মানুষদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে আবার আমাদের ইসলামি খিলাফত শাসনব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। ইসলাম বাকস্বাধীনতার নামে একে অন্যের বিশ্বাসকে আঘাত করার অনুমতি দেয় না। "এরা আল্লাহ্‌‘কে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদাত (পূজা-অর্চনা) করে তোমরা তাদেরকে গালাগালি করো না, তাহলে তারা অজ্ঞতাবশতঃ বৈরীভাবে আল্লাহ্‌‘কেই গালাগালি দিতে শুরু করবে” (সুরা আনআম: ১০৮)। তাই খিলাফত রাষ্ট্রে বিশ্বাসের কারণে কেউ অপমানিত বোধ করে না এবং কারো বিশ্বাসের সম্মানহানির সুযোগ নেই। আবার, বিশ্বাসের স্বাধীনতার কথা বলে কোন জনগোষ্ঠীর বিশ্বাসকে বিকৃত করে অবমাননা করা ইসলামে অপরাধ। তাই খিলাফত রাষ্ট্র কাদিয়ানী বা মাজার পুঁজার মতো বিষয়গুলোকে পুঁজিবাদি রাষ্ট্রের মতো জিইয়ে রাখবে না বরং ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভংগি প্রচার করে এই বিচ্যুতিগুলো থেকে মানুষকে বের করে নিয়ে আসবে, ইনশা‘আল্লাহ্‌। প্রকৃতপক্ষে, ইসলাম পুঁজিবাদের মতো মানুষকে  বিভক্ত করে শোষণ করতে নাজিল হয়নি বরং পুরো মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসতেই ইসলামের উদ্ভব। “আলিফ-লাম-রা; এই কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন, পরাক্রমশালী সর্বপ্রশংসিতের পথের দিকে”। (সুরা ইব্রাহিম: ০১) 

    -    মো:আদনান


Previous Post Next Post