খবর:
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর কয়েকটি সামরিক বিমান ও বেশ কিছু সদস্যের যাতায়াত ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা। সামাজিক মাধ্যমে অনেকের অভিযোগ, ইউএস এয়ারফোর্সের এই অফিসাররা চট্টগ্রামের যে হোটেলে থাকছেন, সেখানকার গেস্ট রেজিস্টার খাতায় নিজেদের নাম বা পরিচয় নথিভুক্ত করা ছাড়াই উঠেছেন। শহরের র্যাডিসন ব্লু হোটেলে তাদের জন্য ৮৫টি কক্ষ আগে থেকেই বুকিং করা ছিল। আইএসপিআর জানিয়েছে, এমন মহড়া নতুন কোনো বিষয় নয়। এর আগেও বাংলাদেশের বাহিনীর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর এমন যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। (https://www.deshrupantor.com/623046/চট্টগ্রামে-মার্কিন-বিমান-ও-সেনা-উপস্থিতি-আসলে-কী)
মন্তব্য:
চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সীমান্ত ঘিরে সম্ভাব্য একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পদধ্বনী শোনা যাচ্ছে। তৎকালীন বার্মাকে (মায়ানমার) ভারত থেকে আলাদা করার জন্য বৃটিশ বার্মা এক্ট-১৯৩৫ এর আদলে ২০২২ সালে আমেরিকা বার্মা এক্ট-২০২২ নামে একটি আইন পাস করেছে, যা পশ্চিমাদের ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের পূর্ব ইতিহাসকে পূনরায় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। যৌথ মহড়ার আড়ালে নাচে-গানে ক্রুসেডার আমেরিকার ঘাতক সৈন্যদের সাথে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার যড়যন্ত্রকে অনুধাবন করার পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগনের এটাও স্মরণ করতে হবে যে মাত্র ৮০ বছর আগেরও এই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলের মুসলিমদের রক্ত ঝরেছিল আমেরিকান ও বৃটিশদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪২ সালে জাপানিজ ইম্পেরিয়াল আর্মি বার্মা দখল করে রেঙ্গুনে ঘাঁটি গেরেছিল। এই অঞ্চলের অত্যন্ত কৌশলগত আরাকান সমুদ্র-উপকূলের নিয়ন্ত্রন ও আকিয়াব এয়ারফিল্ড পুন:র্দখল করার জন্য আমেরিকান মিশনারী ও বিমানবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বৃটিশ বাহিনী চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে ব্যাপক সৈন্যসমাবেশ করে। সাম্রাজ্যবাদীদের এই যুদ্ধে এ অঞ্চলে বসবাসরত অসংখ্য মুসলিম নিহত হন। অনেক মুসলিমকে এই যুদ্ধের বাধ্যতামূলক সৈনিক (mandatory conscription) হিসেবে ও রসদ সরবরাহ লাইনে জোড়পূর্বক শ্রমিক (forced laborer) হিসেবে ব্যবহার করেছিল বৃটিশ ও আমেরিকানরা। চট্টগ্রামের কমনওয়েলথ ওয়ার সেমিট্রি ও কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সেমিট্রিতে এই যুদ্ধে নিহত পশ্চিমা সৈন্যদের করব আজও বিদ্যমান, যা বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের মুসলিমদের জন্য একটি জ্বলজ্যান্ত সতর্কবার্তা হিসেবে জানান দিচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রমাণ করেছে আমেরিকা তার স্বার্থে যেকোন স্থানে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারে। সুতরাং বাংলাদেশের মুসলিমদের সতর্ক হওয়ার এখনই সময়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “চট্টগ্রামে আমেরিকার সৈন্য সমাবেশ ও যৌথ সামরিক মহড়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। গত ১৫ বছর ধরে এই ধরণের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।” অর্থাৎ, হাসিনা তার ক্ষমতার শুরু থেকেই আমেরিকান সৈদ্যদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল এবং এখন পর্যন্ত টাইগার-শার্ক নামে ৪১টি (হাসিনার আমলে ৪০টি সহ) যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আমেরিকান ঘাতক বাহিনী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বারবার বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলেও, নিষ্ঠাবান দল হিযবুত তাহরীর ছাড়া অন্যকোন রাজনৈতিক দল কিংবা তথাকথিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এ নিয়ে টু শব্দটিও করেনি। আমেরিকার সাথে যৌথ সামরিক মহড়া মোটেও কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়, বরং এটা হল আমেরিকার তরফ থেকে স্লো-পয়সনিং যা ধীরে ধীরে বাংলাদেশেকে মরণফাঁদের গভীরে নিয়ে যাচ্ছে। যারা এটাকে স্বাভাবিক বলছে তারাই আমেরিকার গুপ্তচর ও দালালগোষ্ঠী।
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর অস্তিত্বের মূল কারণ হল আমাদেরকে শত্রুদের কবল থেকে রক্ষার ডিটারেন্ট হিসেবে কাজ করা ও প্রয়োজনে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে তাদেরকে পরাজিত করা। এখন, প্রশ্ন হল: আমাদের শত্রু কারা? মহান আল্লাহ বলেন: হে ইমানদারগণ! তোমরা অন্য মুমিনগন ব্যাতিত কোন কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। কাফিররা তোমাদের ক্ষতিসাধনের কোন সুযোগই হাতছাড়া করবে না। তোমাদের ক্ষতি তাদেরকে আনন্দিত করে। (সূরাহ আলি-ইমরান: ১৮)। অর্থাৎ, আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক করে বলছেন কাফির আমেরিকা হল আমাদের শত্রু। অন্যান্য শত্রুর মত আমেরিকার অনিষ্ঠ ও ক্ষতি থেকে দেশের জনগনকে রক্ষা করার জন্যই বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী। সুতরাং, মুসলিমদের স্বার্থ ও আমেরিকার স্বার্থ এক (যৌথ) হয় কিভাবে? মুসলিমদের নিরাপত্তা ও আমেরিকার নিরাপত্তা এক (যৌথ) হয় কিভাবে? অত্র অঞ্চল ঘিরে আমেরিকার যে অশুভ পরিকল্পনা রয়েছে তা থেকে মুক্তির একমাত্র রাস্তা হল অতিদ্রুত বাংলাদেশকে ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষনা করা। রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র যেভাবে অল্প সময়ের ব্যবধানে সকল যুদ্ধ ও সংঘাতকে মদীনা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে নিয়ে গিয়ে মুসলিমদের রাষ্ট্রটিকে স্থায়ী নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করেছিল, ঠিক অনুরূপভাবে খলিফাও সকল যুদ্ধ ও সংঘাতকে আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে মুসলিমদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল উপহার দিবেন, ইনশ’আল্লাহ।
- রিসাত আহমেদ
