আমরা নির্বাচনের কথা বলি ক্ষমতার জন্য নয়

 


খবর:

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমরা নির্বাচনের কথা বলি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, বরং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়, আর জনগণের সেই রায়কেই আমরা শ্রদ্ধা করি। ক্ষমতায় থাকা নয়, দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। (https://www.jugantor.com/politics/998057)

মন্তব্য:

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধরেই নেওয়া হয় যে, সুশাসন এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র মাধ্যম হলো নির্বাচন। তাত্ত্বিকভাবে এই ধারণা ঠিক মনে হলেও এই ধারণার বাস্তবতা যাচাই করা জরুরি।  বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র যা স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মোটামুটি কয়েক ধরনের শাসন পর্যবেক্ষণ করেছে। যেমন: একনায়কতান্ত্রিক শাসন, সেনা শাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন, অসুষ্ঠু নির্বাচন — সবই দেখেছে এই দেশের মানুষ। কিন্তু ঐতিহাসিক বাস্তবতা হলো, এর কোনোটিতেই জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। শাসক গেছে, শাসক এসেছে, কিন্তু অপরিবর্তিত ছিল শাসন ব্যবস্থা এবং জনগণ এর দুর্ভোগ। বস্তুত ডেমোক্রেসি, অটোক্রেসি — সব ক্রেসিতে যে বিষয়টি একই তা হলো শাসকগোষ্ঠীর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা। এই বাস্তবতায় শাসকগণ সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী, এর ফলে যেটা হয় যে শাসকগোষ্ঠী নিজেরা আইন প্রণয়ন ও পরিবর্তন করে  আইন এর ঊর্ধ্বে উঠে যায়। ফলে তাদের কোনো জবাবদিহিতা থাকে না, এবং দেখা যায় তারা রাষ্ট্রে এক প্রকার ডেমি-গড হিসেবে আবির্ভূত হয়। আরও একটি বাস্তবতা হলো, এই ব্যবস্থায় রাজনীতি একটি ব্যবসায়িক মাধ্যম হিসাবে পরিগণিত হয়। এখানে পুঁজিপতিরাই রাজনীতি করে অথবা পুঁজিপতির ছত্রছায়ায় থেকে রাজনীতিবিদরা পুঁজিপতি হয়ে উঠে। এখানে রাজনীতির মূল লক্ষ্য থাকে সর্বোচ্চ ব্যবসায়িক লাভ বা মুনাফা অর্জন, যা রাজনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে যোজন যোজন দূরে।একদিকে অসীম ক্ষমতা সাথে ব্যবসায়িক স্বার্থ — এই দুই মিলেই রাজনীতিবিদরা পরিণত হয় অত্যাচারী, জালিম শাসক এ। এর ফলে জনগণের দেখভাল তো কেউই করে না, বরং জনগণের উপর চাপিয়ে দেয় অর্থনৈতিক ও ব্যবস্থাগত জুলুম।

অন্যদিকে ইসলাম এ শাসক কর্তৃক জনগণের দেখভাল করা একটি Divine obligation। রাজনীতিকে ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় “সিয়াসাহ”, যার অর্থ হলো জনগণের দেখভাল করা। ইসলামী ব্যবস্থায় শাসকের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকে না। শাসকগণ শুধু আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) প্রদত্ত আইন অনুযায়ী শাসন করেন এবং এর জন্য তিনি আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জেনে রাখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন।’” শাসকের আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্য ও আল্লাহ্‌র কাছে জবাবদিহিতার ভয়— শাসককে জনগণের দেখভাল সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে করতে বাধ্য করে। এটি ইসলামের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায়। যেমন: খলিফা উমার ইবনে খত্তাব (রা) তার জনগণের কল্যাণের ব্যাপারে গভীরভাবে সচেতন ছিলেন। তিনি রাতে মদিনার সড়কগুলোয় সাধারণ নাগরিকের বেশ ধারণ করে ঘুরতেন, যাতে মানুষের জীবনযাত্রার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং তাদের অভিযোগ সরাসরি শুনতে পারেন। আবার উসমান ইবনে আফফান (রা) মদিনায় কূপ খননের জন্য নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যবহার করেছিলেন, যাতে সকলের জন্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত হয়। তিনি সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণে তার ব্যক্তিগত সম্পদ ও রাষ্ট্রের সম্পদ ব্যবহার করেছিলেন। কাজেই এটা প্রতীয়মান হয় যে ইসলাম এ শাসকগণ ক্ষমতাকে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল এর মাধ্যম হিসাবে না দেখে জনগণের স্বার্থকে দেখভাল করা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন, যাতে আল্লাহ্‌র সামনে জালিম হিসেবে উপস্থিত হতে না হয়। কারণ জালিম শাসকের পরিণাম ভয়াবহ। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ্‌ তায়ালা অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন, আর ছাড়েন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত তেলাওয়াত করেন, ‘যেসব জনপদ জুলুমে লিপ্ত হয়, তোমার প্রতিপালক যখন তাদের ধরেন, তখন তার ধরা এমনই হয়ে থাকে। নিশ্চয়ই তার পাকড়াও খুবই মারাত্মক, বড় কঠোর।’ (সহিহ বুখারি : ৪৬৮৬; সুরা হুদ : ১০২)।

    -    আবির হোসেন


Previous Post Next Post