খবরঃ
অবরুদ্ধ গাজার দিকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা'র সবশেষ নৌযানেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েল। উপকূলের কাছাকাছি জায়গা থেকে নৌযানটির নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। সরাসরি সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি বাহিনী জোরপূর্বক নৌযানটিতে ওঠে পড়ে। পোল্যান্ডের পতাকাবাহী 'মারিনেট' নামের নৌযানে ছয়জন ক্রু রয়েছেন বলে জানা গেছে। এটিই ছিল গাজা অভিমুখী ফ্লোটিলার শেষ সচল নৌযান। সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ৪০টিরও বেশি বেসামরিক নৌযানের একটি বহর। প্রায় ৫০০ মানবাধিকারকর্মী এই বহরে ছিলেন। ইসরায়েল একে একে এই বহরের নৌযানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে। নৌযানে থাকা মানবাধিকারকর্মী ও ক্রুদেরও আটক করতে থাকে ইসরায়েলি বাহিনী। (https://bangla.thedailystar.net/international/news-703436)
মন্তব্যঃ
সারা বিশ্বের মিডিয়া এই 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা'র দিকে নিজেদের ক্যামেরা তাক করে রাখলেও শেষটা যে এমনভাবেই সম্পন্ন হবে তা অনেকটা অনুমেয়-ই ছিল। গাজার মূল সমস্যা অর্থাৎ ইসরায়েলিদের অবৈধ দখলদারিত্বকে চ্যালেঞ্জ না করে বরং তা পাশ কাটিয়ে এই ফ্লোটিলার সমুদ্রযাত্রা মানবিক দিক থেকে আকর্ষনীয় মনে হলেও গাজাবাসীদের দুর্ভোগ লাঘবে তা নিতান্তই অপর্যাপ্ত। গাজার মানুষদের মূল সমস্যা ত্রাণ নয়, বরং তাদের প্রয়োজন নিরাপত্তা। তাদের প্রয়োজন তাদের বাস্তুচ্যুত ভিটাতে ফিরে যাওয়া। এছাড়া তাদের সাহায্যের নামে করা অন্যান্য সকল কার্যক্রমই সময় ও শ্রমের অপচয় হিসেবে পরিগণিত হবে কেননা এর কোনটাই তাদের মূল সমস্যা অর্থাৎ ইসরায়েলি দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি দিবে না। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চালানো ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়া অন্তত ৬৬ হাজার এবং আহত হওয়া অন্তত ১ লাখ ৬৯ হাজার মানুষের জীবন ও অঙ্গহানির প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র এই বেসামরিক নৌবহর! চোখের সামনে ঘটে যাওয়া পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম গনহত্যার বিরুদ্ধে তথাকথিত মানবাধিকারসমৃদ্ধ সভ্য পৃথিবী আর ৫৭ টারও বেশি মুসলিম দেশের শাসকদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা এই বেসামরিক ফ্লোটিলা?
অবশ্য মুসলিম বিশ্বের শাসকরা বেসামরিক ফ্লোটিলা পাঠাতেও অক্ষম। তাদের সক্ষমতা বড়জোর ট্রাম্পের সাথে মিটিং করে গাজার দায়িত্ব ট্রাম্পের হাতে তুলে দেয়ার মধ্যেই সীমিত। এই কাপুরুষ আর বিশ্বাসঘাতক শাসকরা নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং বিলাসী জীবনযাপনের লোভে এই উম্মাহকে গণহত্যার মুখোমুখি দাড় করাতেও কুন্ঠাবোধ করে না। মূলত এরাই হচ্ছে ইসরায়েলের মূল ডিফেন্স ফোর্স। এরা আছে বলেই ইসরায়েল টিকে আছে। যেদিন এদের বিদায় ঘটবে সেদিন ইসরায়েলেরও বিদায় ঘটবে।
গাজার সমস্যার সমাধান ট্রাম্পের হাতেও নেই, আর মুসলিম বিশ্বের মেরুদন্ডহীন রুয়াইবিদাহ শাসকদের হাতেও নেই। কিংবা পশ্চিমাদের চাকচিক্যময় 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা' বা ফিলিস্তিনকে ইউরোপিয়ানদের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্যেও নেই। এর প্রকৃত সমাধান রয়েছে আমাদের দ্বীনের মধ্যে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।” (সূরা নিসাঃ ৭৫) এই আয়াতে বলা অভিভাবক আর সাহায্যকারী কোনভাবেই আমাদের বর্তমান দালাল শাসকরা না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন ঢাল স্বরূপ, যার অধীনে তোমরা যুদ্ধ করো এবং নিজেদের রক্ষা করো” [হাদিস: মুসনাদ আহমদ]। মুসলিমদের একমাত্র অভিভাবক হচ্ছেন খলিফা। সুতরাং খিলাফত রাষ্ট্রের খলিফার নির্দেশে এসময়ের সালাহউদ্দিন আইয়ুবি কিংবা খালিদ বিন ওয়ালিদদের একটি সামরিক অভিযানই যথেষ্ট ইসরায়েলকে মাটিতে গুড়িয়ে দিতে। কিন্তু হায়! আমাদের সালহউদ্দিন আর খালিদদের আজ অজ্ঞ ও অযোগ্য শাসকরা ব্যারাকে বন্দী করে রেখে আমাদেরকে গণহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সমাধান হিসেবে আমাদেরকে 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা' দেখানো হলেও আমাদের ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। আমরা ইতিহাসের পাতা খুললেই দেখতে পাব ‘বারবারোসা ফ্লোটিলা’র কথা যার ভয়ে ইউরোপিয়ানরা তটস্থ থাকত। ‘Reconquista’র পর স্প্যানিশদের হাতে যখন মুসলিম ও ইহুদীরা নির্যাতিত হচ্ছিল তখন এই ‘বারবারোসা ফ্লোটিলা’ই তাদেরকে উদ্ধার করে উসমানীয় খিলাফতে নিয়ে আসে। ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সুলতান সেলিম (প্রথম) এর অধীনে এই ‘বারবারোসা ফ্লোটিলা’ই হলি লিগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে ভূমধ্যসাগরে মুসলিমদের কর্তৃত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। যেখানে আমাদের মুসলিম শাসকদের পক্ষে সুমুদ ফ্লোটিলার মত একটি নিরীহ নৌবহর পাঠানোর মত ক্ষমতাও নেই সেখানে আমরা দেখেছি খিলাফত ব্যবস্থায় জলে-স্থলে আমাদের বাহিনীর আধিপত্য। সুতরাং সঠিক নেতৃত্ব থাকলে মুসলিমদের বাহিনী হবে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রের ধ্বংসের দূত। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’র বদলে ‘উম্মে হারাম ফ্লোটিলা’ প্রেরণ করবে যা ইসরাইল ও পশ্চিমাদের জন্য ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হবে ইনশা’আল্লাহ।
- মো. হাফিজুর রহমান
