আমরা আর দাসত্বের মধ্যে থাকতে চাই না: প্রধান উপদেষ্টা







খবরঃ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমাদের কাছে এটা পরিষ্কার হতে হবে যে আমরা আর পরনির্ভর হতে চাই না। আমাদেরকে স্বনির্ভর হতে হবে। এখন যেহেতু পরনির্ভর হয়ে আছি। এর থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের হওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এর বাইরে আর কোনো কথা নাই।’স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণকে মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষে প্রণীত মসৃণ উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্য গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বৈঠকের বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরেন। [https://www.jugantor.com/national/1013307]

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে কেন এখনো দাসত্বের মধ্যে আছে!!! বাংলাদেশ কি অঞ্চল হিসেবে অনুর্বর? বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদ বা খনিজ সম্পদে একেবারেই কি অপ্রতুল? নাকি বাংলাদেশের মানুষের বুদ্ধিমত্তা কম? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হল- না। তাহলে কেন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এখনো তার তথাকথিত স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও দাসত্বের মধ্যে রয়ে গেছে? বাংলাদেশ অঞ্চল তার সক্ষমতার অপার সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানকার মানুষ তার বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা ও শ্রম সারাবিশ্বে বিলিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র এখানকার শাসকের সাম্রাজ্যবাদিদের কাছে আজীবন নতজানুতা বাংলাদেশকে একটা দাস রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং একটা অরাজনৈতিক সরকার হওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত সেক্যুলার রাজনীতিবিদদের মতই “কথার কথা” বলে জনগণকে প্রতারণা করার শিল্প তারা ভালোই পারছেন। মূলতঃ তারা জনগণকে ভারতের বলয়ের প্রাধান্য থেকে বের করে আমেরিকার বলয়ে প্রবেশ করানোকে “মুক্তি” বলে জনগণকে প্রতারিত করছেন। এখন পর্যন্ত গ্যাসসমৃদ্ধ বাংলাদেশকে গ্যাসের জন্য পরনির্ভর রাখার চুক্তি, গম চুক্তি, শুল্ক কমাতে অতিরিক্ত মূল্যে সম্প্রতি কারিগরি ত্রুটি পাওয়া ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার চুক্তি, স্টারলিঙ্ক যেন বাংলাদেশকে তার ব্যবসায়িক হাব বানাতে পারে এবং বাংলাদেশের স্পর্শকাতর তথ্য পাচার করে সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলার বন্দোবস্তমূলক চুক্তি, ওয়ার অন টেররের নামে ইসলামের আদর্শের ফিরে আসাকে ঠেকানোর জন্য এফবিআই এর সাথে বাংলাদেশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের সমঝোতা, গাযায় হত্যাকারীদের সাহায্যকারী আমেরিকার সৈন্যদের সাথে প্রতিনিয়ত মহড়া, আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজের সৌজন্য জানাতে আসা, মায়ানমারে দেশের সেনাবাহিনীকে প্রক্সি ওয়ারে জড়ানোর প্রচেষ্টা, চট্টগ্রাম বন্দর আমেরিকার পছন্দ করা কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার প্রবল আগ্রহ ইত্যাদি সবই বাংলাদেশের শিশুকেও বুঝিয়ে দিতে পারে যে বাংলাদেশ এখন আমেরিকার নব্য দাসে পরিণত হয়েছে। 

সত্যিই যদি বাংলাদেশ দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায় তবে তাকে ঔপনিবেশিক বন্দোবস্ত থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ এই বন্দোবস্তের যেকোন শাসক, বুদ্ধিজীবি কোন না কোন বহিঃশক্তির দাস হওয়া ছাড়া এগিয়ে যাওয়ার  আর কোন উপায় দেখেন না। তাই এর বাইরে সমাধানও তাদের জানা নেই। নিজেদের অর্থ ও ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ ছাড়াও বহিঃশক্তির পারমাণবিক শক্তি, ডলারের আধিপত্য, সীমানার আধিপত্য, তথাকথিত আন্তর্জাতিক মহলের নিয়ম কানুন ইত্যাদি বাস্তবতা তাদেরকে দাসত্ব থেকে বের হওয়ার কল্পনাও করতে দেয় না।

একমাত্র ইসলামি জীবনব্যবস্থায় এই বাস্তবতা থেকে বের হওয়ার আধ্যাত্মিক এবং প্রায়োগিক দিকনির্দেশনা আছে। যেহেতু ইসলামের শুরু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার আধিপত্য মেনে নেয়ার মাধ্যমে। তাই ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফত আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের সীমানাকে ভারসাম্য করেই রাষ্ট্রপরিচালনা করবে। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের উপর কাফিরদের আধিপত্য মেনে নেবেন না”। [সূরা আন নিসাঃ ১৪১] তাই খিলাফত রাষ্ট্রের জন্য আল্লাহ ব্যতীত কারো আধিপত্য মেনে নেয়ার চিন্তাও প্রযোজ্য নয়, তা মানুষের সীমিত জ্ঞান যতই তাকে প্ররোচিত করুক না কেন!!! এছাড়া আল্লাহর রাসূল এমন সময় মদিনায় রাষ্ট্র গঠন করেন যখন পরাশক্তি হিসেবে ছিল রোম ও পারস্য। তাই পরাশক্তি থাকা অবস্থায় ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করে কিভাবে অচিরেই পরাশক্তিতে পরিণত হওয়া যায়, তার রূপরেখা তো আমাদের সামনেই আছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দেখানো পথেই মিলবে ব্রিটেন-আমেরিকা-ভারতের হাত থেকে মুক্তি।

    -    জাবির জোহান


Previous Post Next Post