‘হাসপাতালের বিছানায় নুরুল মজিদের হাতকড়া নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন মানবাধিকারকর্মীরা’

 


খবরঃ

সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুকে দেওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তিনি (নূরুল মজিদ) হাতকড়া পরা অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। তাঁর চোখ বন্ধ।…মানবাধিকারকর্মী নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আসামির সঙ্গে নিষ্ঠুর বা অমানবিক আচরণ করা যায় না। সেখানে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল মজিদ হুমায়ূনের সঙ্গে যেটা ঘটেছে, তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, সেটি মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। একজন আসামি, যিনি মৃত্যুশয্যায়, তাঁর হাতেও হাতকড়া পরিয়ে রাখতে হবে?’ (https://www.prothomalo.com/politics/w76c1pwd4y)

মন্তব্যঃ

‘মানবাধিকার’ শব্দটি শুনলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, এটা হয়তো অত্যাচারিত বা নিপীড়িত মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই ধারণাটি ইউরোপের জনগণের উপর সামন্ততান্ত্রিক নিপীড়নের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ‘জন লক’ এর মত দার্শনিকগন কর্তৃক উদ্ভাবিত। এই ধারণায় মনে করা হয়, ‘মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই ভালো। যদি মানুষকে যা খুশি তাই করতে না দেওয়া হয়, তাহলে সে খারাপ কাজ করে। তাই মানুষকে সমাজ কর্তৃক যা খুশি তাই করতে পারার সুযোগ করে দেওয়াটাই মানবাধিকার’। এই মানবাধিকার নামক ধারণার বাস্তবায়নের জন্য তারা মানুষের অবাধ স্বাধীনতার বিশ্বাস করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মানুষ প্রকৃতগতভাবে ভালো বা মন্দ না। তার কিছু ‘প্রবৃত্তি’ ও ‘প্রয়োজন’ রয়েছে, (যেমন, বেঁচে থাকার জন্য খাবার-পানি, প্রজননের প্রবৃত্তি ইত্যাদি) যেগুলো তাকে পূরণ করতে হয়। মানুষ ভালো উপায়ে সেগুলো পূরণ করলে, সে ভালো মানুষ হয়, আর খারাপ উপায়ে সেগুলো পূরণ করলে, সে খারাপ মানুষ হয়। আর কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ- সেই মাপকাঠি ঠিক করার যোগ্যতা আবার কোন মানুষেরই নেই (কারন, মানুষ মাত্রই সীমাবদ্ধ জ্ঞান সম্পন্ন- যেমন, ‘জন লক’ কিংবা ‘নুরুল মজিদ’)। এই যোগ্যতা আছে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), যিনি সর্বজ্ঞানী। মানুষের কাছ থেকে ভালো বা মন্দের জ্ঞান নিলে সমাজে ‘জন লক’দের মত দার্শনিক ও ‘নুরুল মজিদ’ এর মতো রাজনীতিবিদ তৈরি হয়, যারা মিলেমিশে মানব সমাজকে জঙ্গলে পরিণত করে। 

যাই হোক, বাংলাদেশের জুলাই’২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় পূর্বের মুল্লুকের তথাকথিত মালিক নুরুল মজিদরা নতুন মালিকদের কর্তৃক বিচারের সম্মুখীন। এই অবস্থায় আবার ‘নুরুল মজিদ-হাসিনা’ গ্যাং কর্তৃক সুবিধাভোগী ও পশ্চিমা চিন্তা দ্বারা দূষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণী মানবাধিকার! মানবাধিকার! বলে আর্তনাদ করছে। যে পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ মদদে ফিলিস্তিনের গাজায় আজও গণহত্যা চলছে। যে পশ্চিমারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অন্তত তিন কোটি মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। যাদের দেখানো পথে বিগত ১৭ বছর ধরে নুরুল মজিদ-হাসিনা গ্যাংরা জনগণকে গুম, খুন ও নিপীড়ন চালিয়েছিল এবং সর্বশেষ ২০২৪ এর জুলাইয়ে জনগনের উপর গণহত্যা পর্যন্ত চালিয়েছিলো। এই বুদ্ধিজীবীরা এটাও ভুলে গিয়েছে, যে আইনে আজকে মৃত্যুপথযাত্রী নুরুলের হাতে হাতকড়া, সেই কুফর-উপনিবেশবাদী বৃটিশ কর্তৃক প্রণীত আইন দিয়েই এরা এতদিন জনগণকে নিপীড়ন করেছিল!

অথচ এসকল বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর উচিত ছিল, নিজেদের বুদ্ধির সঠিক ব্যবহার করে পশ্চিমাদের থেকে নিকট থেকে আগত মানবাধিকারের মত যেকোনো ধারণার গভীরে গিয়ে তার প্রকৃত স্বরূপটি উপলব্ধি করা। সেটা কতটুকু সঠিক? কতটুকু বাস্তব? মানব সমাজের উপর এটি বাস্তবায়নের ফলাফল কি?-এগুলো সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে তারপর সেগুলো গ্রহণ বা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া। তারপর এগুলোর অসাড়তা বুঝতে পেরে নিজেদেরকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নিকট হেদায়েতের (সত্য পথনির্দেশ) জন্য সমর্পণ করা।

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেছেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী, পূর্ণ অবহিত।”

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম

Previous Post Next Post