খবরঃ
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারের চেয়ে কোম্পানিগুলো বেশি ‘স্মার্ট’। স্মার্ট বলেই তারা এত অর্থ পাচার করতে পেরেছে। অর্থ পাচার করার জন্য কোম্পানিতে যে কত ধরনের তেলেসমাতি হয়, তা এখন টের পাচ্ছি।
আজ সোমবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ইআরএফ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ‘করপোরেট খাতে আর্থিক স্বচ্ছতা’ শীর্ষক সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়। [https://www.prothomalo.com/business/economics/ba6k1q097y]
মন্তব্যঃ
অর্থ উপদেষ্টার মত উচ্চশিক্ষিত মানুষ যখন সরকার আর কোম্পানি- এই দুটো প্রতিষ্ঠানকে আলাদা করে দেখেন, তখন বোঝা যায় যে তিনি এডাম স্মিথের তত্ত্বের উপর ভরসা রাখেন। আধুনিক পুঁজিবাদের জনক এডাম স্মিথের তত্ত্ব অনুযায়ী কোম্পানি, ব্যক্তি সবাই Self-Interest এর ভিত্তিতে কাজ করবে। ‘বাজার’ সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করবে। সরকারের ভূমিকা থাকবে রেফারির। এতে করেই কোন কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ ছাড়া অদৃশ্য হাত (Invisible hand) এর মাধ্যমে সমাজের সার্বিক উন্নয়ন অর্জিত হবে। অত্যন্ত শ্রুতিমধুর বা পাঠ্যমধুর তত্ত্ব হলেও কখনোই এর প্রায়োগিক গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। ১৭৭৬ সালে এডাম স্মিথের তত্ত্ব আসার পরপরই শিল্প বিপ্লবের বাস্তবতাকে ডিল করতে গিয়ে সরকারকে তার ‘রেফারি’ ভূমিকা বাদ দিয়ে কোম্পানির সাথে জোট করতে হয়। Economic Policy Partnership এর নাম করে সরকার ও কোম্পানি হয়ে ওঠে একটা সিন্ডিকেট। সরকার আইন বানায় কোম্পানিকে সুবিধা দেয়ার জন্য, এবং কোম্পানি নিশ্চিত করে তারাই যেন ক্ষমতায় আসে যারা তাদের জন্য আইন বানাবে। এডাম স্মিথের তত্ত্ব অনুযায়ী Self-Interest এর ভিত্তিতে ঠিকই সরকার ও কোম্পানি আগাচ্ছে, কিন্তু তিনি যেই মুক্ত প্রতিযোগিতার নৈতিকতার সেটাপ বাই ডিফল্ট তিনি ধরে নিয়েছিলেন যেটাকে Adam Smith’s moral assumption problem হিসেবে ধরা হয়, তা কখনোই প্রয়োগ করা যায় নাই। বরং এডাম স্মিথের তত্ত্ব এর Self Interest ভিত্তি হিসেবে ধরে তার সুস্থ প্রতিযোগিতার সেটাপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৮০ এর দশকে Trickle Down Theory আসে, যেখানে বলা হয় যে কোম্পানিকে অনেক বেশি পরিমাণ সাহায্য করলে তা দরিদ্রদের ভাগেও যাবে। যেখানে সরকারের ভূমিকা থাকার কথা ছিল রেফারির, সেখানে সে বেঁধে ফেলল কোম্পানির সাথে জোট। তাই সরকারের সাহায্য ছাড়া টাকা পাচারে কোম্পানিগুলোর স্মার্টনেসের তেলেসমাতি দেখানো অসম্ভব। যে কারণে হাসিনা যাওয়ার পরেও ৫৬ শতাংশ অর্থ পাচার বেড়েছে। [https://www.newagebd.net/post/banking/266049/suspicious-transactions-of-money-rise-by-56pc?utm_source=chatgpt.com]
Self Interest এর উপর ভিত্তি করে যখন একটা সিস্টেম সরকারকে আইন বানানোর ক্ষমতা দেয়, তখন তা Survival of the fittest প্রতিযোগিতার শেষ রাউন্ডের প্রতিযোগিদের নিয়ে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে। যারা সরকারের বানানো আইন ব্যবহার করে ট্যাক্স ফাকি, টাকা পাচার, শ্রমিকদের বেতন না দেয়া ইত্যাদি আইনসংগতভাবেই করতে পারে।
মানুষের জীবনের লক্ষ্য এবং নৈতিকতার একটা ব্যালেন্স তৈরি করতে এডাম স্মিথ ব্যর্থ হয়েছেন, কারণ তিনি স্রষ্টাকে তার সমীকরণের মধ্যে আনেনি। যদি আনতেন তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা’র স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমেই সমাজ ও ব্যক্তি উভয়ের স্বার্থরক্ষা হয়ে যেত। অদৃশ্য হাত বা (Invisible hand) এর বদলে স্রষ্টার দেয়া বিধি-বিধানই সামাজিক ব্যালেন্স তৈরি করে ফেলত। ঐতিহাসিকভাবে যা পরিলক্ষিত হয় ইসলামি শাসনব্যবস্থা খিলাফতে। যখনই কোন ব্যবসায়ী রুটি, মাংস কিংবা রেশমের একচেটিয়া ব্যবসা খুলে বসতেন যা উম্মাহর ক্রয়সীমার বাইরে চলে যেত, তখনই খলিফা সেখানে নানারকম পদক্ষেপ নিতেন। যেমন খলিফা আব্দুল হামিদ যখন দেখলেন রুটির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন তিনি রাষ্ট্রীয় খরচে বাজারে রুটির যোগান বাড়িয়ে দিলেন। এতে করে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে রুটির দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসলো। খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের সময় ইয়েমেনের মাংস ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম উম্মাহর নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে গেলে, তিনি বাইরে থেকে মাংস ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানান। এতে করে মাংসের দাম নিয়ন্ত্রনে আসে। এই ঘটনাগুলো আমাদের বোঝায় যে এখানে খলিফাদের জোট ছিল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সাথে। যেই জোটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জনমানুষও থাকত। তাই ইসলামি রাষ্ট্রে জনগণের টাকা পাচার করার কোন কৌশলই কাজে লাগবে না, তা কোম্পানিগুলো যত স্মার্টই হোক না কেন!!!
- জাবির জোহান