খবরঃ
বিদেশে কষ্টার্জিত আয় দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এক কোটি প্রবাসীর উপরও এবার করের খড়্গ। প্রস্তাবের পাশাপাশি রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে লোকসানি ব্যবসায় আরো বেশি হারে কর বসানোরও শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। প্রতি মাসেই বাড়তি রেমিট্যান্স আসছে। এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কারণেও রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। (https://www.bd-pratidin.com/economy/2025/10/07/1165193)
মন্তব্যঃ
বিগত সরকারের সীমাহীন অর্থ পাচারের বিষয়ে নিশ্চুপ IMF এখন প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ের উপর কর বসাতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে। অথচ, বিগত সরকারের আমলে পাচারকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ ফিরিয়ে এনে দেশের অর্থনীতি গতিশীল করা সম্ভব। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ শেখ হাসিনার শাসনামলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে : ফিনান্সিয়াল টাইমস, বিএসএস নিউজ, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫। কিন্তু, আইএমএফ বিগত সরকারের আমলে পাচারকৃত অর্থ ফেরত এবং ভবিষ্যত অর্থ পাচার বন্ধে কোন পরামর্শ দেয় নাই। কারণ বাংলাদেশের মত দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের সুবিধাভোগী যেমন পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তেমনি এই পাচারের ফলে ডলার মুদ্রা হিসেবে শক্তিশালী হয় যা IMF এর জন্মের ম্যান্ডেট। আইএমএফের চোখ এখন প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ের উপর যারা ইতিমধ্যে হোস্ট কান্ট্রিতে (Host Country) এক বা একাধিকবার কর প্রাদানে বাধ্য হয়েছেন। সুতরাং, দেশে রেমিটেন্সের (remittance) উপর নতুন করে কর আরোপের ফলে প্রবাসী শ্রমিক এবং তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়াও, দেশের বৈদাশিক মুদ্রা আয়ও বাধাগ্রস্ত হয়ে রিজার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। ফলস্বরূপ, দেশীয় মুদ্রা টাকার উপর ডলার শক্তিশালী হবে। অথচ, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং পলিসির উপর বৈশ্বয়িক আস্থা তলানিতে যার ফলে ডলারের মান পতনমুখি। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনের মুখে ডলার, প্রথম আলো, ০১ জুলাই ২০২৫। এই প্রেক্ষাপটে, আইএমএফ ডলারের ক্রমবর্ধমান পতনের ধারাকে হ্রাস করতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উপর বিভিন্ন পলিসি চাপিয়ে দিচ্ছে। প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ের উপর কর আরোপের পরামর্শ তারই একটি অংশ। আইএমএফ আমেরিকার নেতৃত্বাধীন নব্য উপনিবেশবাদের এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার মূল লক্ষ্য পলিসি ম্যানিপুলেশেনের মাধ্যমে ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখা অর্থাৎ, মান বৃদ্ধি বা মান কমার পরেও কৃত্রিমভাবে মূল্য স্থিতিশীল রাখা। যার ফলে, বিশ্বব্যাপী আইএমএফ এর পলিসি সংকট ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে নাই। গ্রীস, আর্জেন্টিনা এবং ইউক্রেন তার কিছু জ্বলন্ত উদাহরণ। সাম্প্রতিক সময়, গ্রিক অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্লেটসস ও আন্দ্রেয়াস সিন্টোস একটি গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন আইএমএফের কঠোর শর্তযুক্ত ঋণ গ্রহণকারী দেশগুলোয় বেকারত্ব বেড়েছে, কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে এবং শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা গভীরতর হয়েছে। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ আইএমএফের ঋণ কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার পর বেকারত্ব বেড়েছে, বণিক বার্তা, ৬ অক্টোবর ২০২৫।
প্রশ্ন হচ্ছে নব্য উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ এবং তার স্পন্সার (Sponsor) আমেরিকার পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ব্যর্থতার দিনের আলোর মতো দৃশ্যমান হলেও সমাজের চিন্তাশীল ব্যাক্তিবর্গ কেন অন্য কোন বিকল্প খুঁজছেন না? তারা কি পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেয়া পুঁজিবাদী চিন্তাকে প্রশ্ন করতে এবং তার বিকল্প অনুসন্ধানে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অক্ষম? অথচ, ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ন্যায় ভিত্তিক এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দিয়েছেন যার মাধ্যমে শুধু মুসলিম নয় গোটা মানবজাতি উপকৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ”আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম..” আল-আ'রাফ, আয়াত ৯৬। ইসলামের স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রয়েছে স্বর্ণ এবং রোপ্য ভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থা যার ফলে কৃত্তিমভাবে মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি বা স্থিতিশীল রাখার সুযোগ নাই। এছাড়াও, ইসলামের কর ব্যবস্থা বর্তমান কর ব্যবস্থার (আয় এবং ব্যায়ের উপর কর) বিপরীতে শুধুমাত্র সঞ্চয়ের উপর এবং সুনির্দিষ্ট। শাসক তার ইচ্ছায় শারীয়াহর বাহিরে গিয়ে কোন নতুন কর ধার্য করতে পারবে না। জনগণ তাদের আয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করার মাধ্যমে সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক জীবন লাভ করবে। খিলাফতের ১৩০০ বছরের ইতিহাস আল্লাহ প্রতিশ্রুত সেই বরকতের স্বাক্ষী। মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজিজের শাসনামলে যাকাত নেওয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল, কারণ তাঁর সময়ে জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা এতই উন্নত হয়েছিল যে যাকাত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল এমন দরিদ্র লোক খুঁজে পাওয়াই কঠিন ছিল।
- মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম
