খবরঃ
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, মার্কিন বেসরকারি খাতের মনোভাব গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো বলে মনে হয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে চলা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার চলছে।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গতবার তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। এবার তারা বলেছেন, বাস্তব উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন বেসরকারি খাতের মনোভাব এখন অনেক ভালো। তিনি বলেন, শেভরন ও মেটলাইফের পাওনা অর্থ ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে, যা তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশকে দ্রুততম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী অর্থনীতিগুলোর একটি হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদা এবং বাজারকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বড় সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। তাদের অনেকে আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন।
(https://samakal.com/economics/article/320661/বাংলাদেশ-নিয়ে-যুক্তরাষ্ট্রের-বিনিয়োগকারীরা-ইতিবাচক)
মন্তব্যঃ
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান হারে বেকারত্ব বৃদ্ধি, বিনিয়োগের শ্লথ গতির ধারা প্রত্যক্ষ করে দেশের সাধারণ মানুষও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা দেশের অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে! বিশেষ করে তারা ইন্টিরিম সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের পদক্ষেপগুলোর ভূয়াসী প্রশংসা করছে। অর্থাৎ, সরকারের তথাকথিত সংস্কার কার্যক্রমগুলো দেশের মানুষের প্রয়োজন পূরণে ব্যার্থ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ পূরণ করছে শতভাগ। ইন্টিরিমের সংস্কার কার্যক্রমগুলোর প্রতি ভালোভাবে দৃষ্টি আরোপ করে বিষয়টি বোঝা সম্ভব। ইন্টিরিমের একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সংস্কার হলো আইএমএফের চাহিদা অনুযায়ী ডলারের মূল্য বাজারভিত্তিক করা। ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার পিছনে সব থেকে বড় যুক্তি ছিল এর ফলে বাজারের উপর ভিত্তি করে ডলারের মূল্য নির্ধারিত হবে যার ফলে দেশের ভোক্তারা উপকৃত হবে। কিন্তু, বাস্তবে দেখা গেল যখন প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হ্রাস পাওয়ার ফলে ডলারের চাহিদা হ্রাস পায় এবং তখন সরকার বাজার থেকে ডলার ক্রয় করার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে ডলারের মূল্য ধরে রাখছে। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ নিলামে আরও চড়া দামে ১০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, স্ট্যান্ডার্ড, ২৪ জুলাই, ২০২৫। ডলারের মূল্য কৃত্রিমভাবে টিকিয়ে রাখার ফলে আর্ন্তজাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমলেও দেশের বাজারে এর প্রভাব পরছে না। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমছে, বাংলাদেশে সুফল কম কেন, প্রথম আলো, ২২ আগস্ট ২০২৫। কিন্তু, ডলারের কৃত্রিম বর্ধিত মূল্যের ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারী বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী এবং আমেরিকার রপ্তারিকারকরা উপকৃত হচ্ছে। ইন্টিরিমের অনান্য অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম যেমনঃ কৌশলগত স্থাপনা চট্রগ্রাম বন্দরকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রাধীন কোম্পানীকে ইজারা, বন্দর পরিচালনাকে অতিলাভজনক করার জন্য বন্দর ব্যবহারের ট্যারিফের রেকর্ড বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষি পণ্য (যেমনঃ গম, তুলা), জাহাজ, এবং বিমান ক্রয় ইত্যাদি। এই কার্যক্রমগুলোর ফলে দেশের মানুষ উপকৃত না হলেও বিদেশী বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এবং বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হচ্ছে। সুতরাং, ইন্টিরমের সংস্কার কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্র এবং সেই দেশের বিনিয়োগকারীরা খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল এবং বুদ্ধিজীবিরা ইন্টিরিমের মার্কিন স্বার্থ রক্ষার সংস্কার প্রকল্পের কোন বিরোধীতা করছে না বরং তারা সকল শক্তি নিয়ে আমেরিকার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে আদা-জল খেয়ে কাজ করছে। অর্থাৎ, ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলগুলোও ইন্টিরিমের যুক্তরাষ্ট্র স্বার্থ রক্ষার প্রকল্পের অংশ। অবস্থাদৃষ্ট মনে হচ্ছে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ভারত উপমহাদেশ দখলের পূর্বে ক্ষমতালোভী-অসৎ, রাজনীতিবিদদের যেমন প্রথমে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে আসে তেমনি আমেরিকা ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। নব্য মীর জাফর ক্ষমালোভী রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে নিজেদের অজান্তে এই দেশকে আমেরিকার হাতে তুলে দিচ্ছে যেমনটা মীর জাফর বৃটিশদের হাতে ভারত উপমাহদেশকে তুলে দিয়েছিল।
এসব নির্বোধ শাসকদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ আমাদের সতর্ক করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “মানুষের উপর বিশ্বাসঘাতকতার এমন বছর আসবে, যখন মিথ্যাবাদীকে সৎ এবং সৎ ব্যক্তিকে মিথ্যাবাদী হিসেবে গণ্য করা হবে; বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বস্ত এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে গণ্য করা হবে; এবং ‘রুয়াইবিদা’-রা জনগণের বিষয়গুলো নির্ধারণ করবে।’ সাহাবাগণ (রা.) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্, “রুয়াইবিদা কি?” তিনি বললেন, সে সকল নির্বোধ ও অযোগ্য শাসক যারা জনগণের ব্যাপারে কথা বলবে” [ইবনে মাজাহ্]।
মিথ্যাবাদী এবং বিশ্বাসঘাতক এই সকল শাসকদের হাতে জনগণের বিষয়াদি দেখাশুনার দায়িত্ব থাকা শুধু ঝুঁকিপূর্ণ নয় বরং ক্ষতির কারণ তারা তাদের অজ্ঞতার কারণে জনগণের উপর অপ্রয়োজনীয় বিপদ ঢেকে আনে। সুতরাং, আমেরিকাপন্থি এই শাসকগোষ্ঠীর বিকল্প হচ্ছে সেসব নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদগন যারা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে প্রণীত ইসলামী সংবিধান দ্বারা নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত রাষ্ট্র পরিচালনা প্রস্তুত। তারাই জনগণকে উপনিবেশবাদী আমেরিকাসহ সকল উপনিবেশবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করবে।
- মোঃ সিরাজুল ইসলাম
