মানবতাবিরোধী অপরাধ’: ১৫ সেনা কর্মকর্তা ‘হেফাজতে’

 


খবরঃ 

গুমের দুই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। ‘গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধে’ জড়ানোর অভিযোগে সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জনকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছে সেনা সদর।  আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী মতের লোকদের গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বুধবার ৩০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।এর মধ্যে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৭ জন এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) বন্দি রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৩ জন আসামি।(https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/16d641afc0b4

মন্তব্যঃ 

দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর(পুলিশ-র‍্যাব-আনসার) মতই সামরিক বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে গুম, খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার সহ ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার মূল অপরাধী হল ধর্মনিরেপেক্ষ শাসকেরা। কারণ বৃটিশ ঔপনিবেশিক সময় থেকেই ধর্মনিরেপক্ষ শাসকরা অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর মত সামরিক বাহিনীকেও হাতিয়ার করে গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও ভয়-ভীতির পরিবেশ তৈরি করে ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ঔপনিবেশিক আমলে বৃটিশ সরকার “The Code of Criminal Procedure, 1861 & 1898” অনুযায়ী সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করে বৃটিশ দখলদ্বারিত্ব ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফুসে ওঠা জনগণের বিদ্রোহ দমন ও গণগ্রেফতারের কাজে ব্যবহার করে। এরপর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা ১৯৬০ ও ১৯৭০’র দশকে মার্শাল ল(Martial Law) জারি করে সেনাবাহিনীকে প্রশাসনিক ও বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করে এবং ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তানে(বাংলাদেশ) অপারেশন সার্চ লাইট অভিযানে নিয়োজিত করে শত শত নিরীহ জনগণকে হত্যা করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশে বিএনপি জোট সরকারের আমলে অপারেশন ক্লিন হার্ট অভিযানে এবং পতিত হাসিনার শাসনামলে নির্বিচারে জনগণকে গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডে আমাদের সামরিক বাহিনীকে ঘৃণ্যভাবে ব্যবহার করা হয়। 

একই ধারাবাহিকতায় বর্তমান অন্তর্বতী সরকারও বিদেশী আগ্রসন মোকাবেলা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালীভাবে ব্যবহারের পরিবর্তে দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রেখেছে। অন্তর্বর্তী সরকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে যত্রতত্র সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করছে, ছাত্র-জনতার বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি দাওয়া ও ন্যায্য আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে আমাদের সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করছে।  শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, বর্তমান সময়ে পৃথিবীর প্রত্যেকটা রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা   বাহিনীর মধ্যেও এই একই চিত্র লক্ষ্যণীয় যারা শাসকগোষ্ঠীর বিভিন্ন অপরাধের সহযোগী ও তাদের মসনদ টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

একমাত্র নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত ব্যবস্থা আমাদের মুসলিম সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে ব্যবহার করবে। খিলাফত ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ বিভাগের অধীনে নিয়ে আসা হবে যার সর্বাধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিবেন স্বয়ং খলীফা নিজে। খলীফা সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হলেও রাষ্ট্রের সব বিভাগ এক সার্বভৌম সত্তা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা’র আইন অনুযায়ী আবদ্ধ। খলিফা রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান হিসেবে শারীআহ্‌ আইন ভঙ্গ করলে বা রাষ্ট্রের কোন বিভাগকে শারীআহ্‌ বহির্ভুত নির্দেশনা প্রদান করলে তাকে মাহ্‌কামাতুল মাযালীম আদালতের মুখোমুখি ও অপসারিত হতে হবে। ফলশ্রুতিতে খিলাফত ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর মত প্রতিষ্ঠানকে কোন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ নেই। বরং খিলাফত রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী হবে ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। মুসলিম সামরিক বাহিনীর সামরিক দর্শন হবে  বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে সুরক্ষা প্রদান করা এবং ইসলামের শত্রুদেরকে পরাজিত করে নতুন নতুন ভূখন্ডকে ইসলামের ন্যায়ের শাসনের অধীনে নিয়ে আসা। ফলশ্রুতিতে খিলাফত রাষ্ট্র তার সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে শক্তিশালী করবে যাতে কাফির-ঔপনিবেশিকদের হৃদয়ে ভীতি জাগ্রত হয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুর’আনে বলেন: “আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যা দ্বারা তোমরা ভীত–সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শক্রকে ও তোমাদের শক্রকে” [সূরা আল-আনফাল: ৬০]।

    -    কাজী তাহসিন রশীদ      


Previous Post Next Post