এ শহরে আগুনে পুড়ে মানুষ মরে, আমাদের কোনো অনুভূতি নেই

 


খবরঃ

গতকাল মঙ্গলবার ‘জাদুর শহর’ রাজধানী ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে একটি ভবনে আগুন লাগে।… সংবাদমাধ্যমে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগুনে পুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা আসতে থাকল। কিন্তু সে খবর আমাদের আর দেখা হয় না, সে খবরে কোনো ক্লিক নেই, ফলে ভাইরাল হয় না। এতগুলো মানুষের মৃত্যু নিয়ে কোনো আলোচনাই হলো না। যেন এটি খুবই সাধারণ কোনো ঘটনা!... (https://www.prothomalo.com/opinion/column/ejiyxprnie)

মন্তব্যঃ

এই শহরের মানুষ আগুনে পুড়ে মরলেও আমাদের কোন অনুভূতি নেই, কথাটা সত্য নয়। কারণ আমরা দেখেছি, রানা প্লাজায় অগ্নিকাণ্ড কিংবা অন্যকোন জাতীয় দুর্যোগের সময় সাধারণ মানুষ জানবাজি রেখে উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করেছে। বরং আমরা দেখেছি এসব উদ্ধারকার্যে রাষ্ট্রের ব্যাপক ব্যর্থতা। আমাদের অনুভূতি বা চিন্তাকে বর্তমান সমাজে কখনো স্বাভাবিকভাবে চলতে দেয়া হয় না। এটাকে প্রতিটি স্তরে বাঁধাগ্রস্থ করা হয় রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া বা গণমাধ্যম দ্বারা। আমরা দেখেছি সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, কতিপয় পুঁজিপতি, মিডিয়া হাউজগুলোর মালিক স্বার্থান্বেষী কতিপয় ব্যক্তি কিভাবে বিভিন্ন ঘটনা সমূহ ধামাচাপা দিতে কিংবা ইস্যু ঘুরিয়ে দিতে মিডিয়ার খবরকে নিয়ন্ত্রিত করেছে। আমরা দেখেছি রানা প্লাজার ব্যর্থতাকে আড়াল করতে তৎকালীন সরকার রেশমা নাটকের অবতারণা করেছিল, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইসুকে আড়াল করতে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলাকে মিডিয়ার ফোকাসে নিয়ে আসা হয়।  তারা যেসব কৌশল প্রয়োগ করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- এজেন্ডা সেটিং (এই প্রক্রিয়ায় তারা বারবার তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবরাখবরগুলোকে জনগণের সামনে প্রদর্শন করতে থাকে, যার ফলে জনগণের জন্য অন্য খবরগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও- সেগুলো সম্পর্কে তারা বেখবর হয়ে যায়) কিংবা ‘ফ্রেমিং’ (যার মাধ্যমে তারা কোন ঘটনাকে শব্দের মার-প্যাঁচে পজেটিভ বা নেগেটিভ বানিয়ে ফেলে- যেমন দখলদার খুনী ইসরাইলী বাহিনীর বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা হয়ে যায় সন্ত্রাসী) এর মতো আরো অনেক প্রতারণামূলক পদেক্ষেপ। এগুলোর মাধ্যমে তারা মানুষের চিন্তা জগতের উপর আগ্রাসন চালায়। তারপর দিনশেষে এই তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলোর কলামিস্টরাই এই কলামিস্টের মতোই মানুষকে ‘অনুভূতিশূন্য’ বলে কটাক্ষ করে। 


গণমাধ্যম দ্বারা আমাদের চিন্তা চেতনার উপর এই ধরনের আগ্রাসন রুখতে হলে আমাদের সরকার, পুঁজিপতি গোষ্ঠী ও উপনিবেশবাদীদের কর্তৃত্বমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজন। যা একমাত্র দেশের মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও আকিদা- ইসলামের ভিত্তিতেই হতে পারে। ইসলাম বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মতো মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ পুঁজিপতিগোষ্ঠী কিংবা উপনিবেশবাদীদের হাতে তুলে দিবে না, বরং আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা) হুকুমে এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান তথা খলিফা মিডিয়াকে ইসলাম, মুসলিম ও রষ্ট্রের নাগরিকদের স্বার্থের পক্ষে পরিচালিত করবেন। এর মাধ্যমে খলিফা ইসলামি ভূমিসমূহকে খিলাফত রাষ্ট্রের সাথে একত্রিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন। ইসলামী রাষ্ট্রের স্বার্থে বিশেষতঃ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত খবরগুলো খুব শক্তিশালীভাবে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যেমন, আল্লাহর রাসুল (সঃ) মক্কা বিজয়ের খবরটি মক্কা অভিযানের আগে খুব শক্তভাবে গোপন রেখেছিলেন। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত খবরাখবর বাদে অন্যান্য খবরাখবর-যেমন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি খবরাখবরগুলো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের আওতা মুক্ত থাকবে। আর তখন উপনিবেশবাদী শক্তির নিয়ন্ত্রনমুক্ত থাকার কারনে উম্মাহর চিন্তাসমূহ স্বাভাবিকত্ব ফিরে পাবে এবং আগুন লাগা কিংবা অন্যান্য দূর্যোগের মুহূর্তে রানা প্লাজা কিংবা মাইলস্টোন ট্রাজেডির সময়ে তারা যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলো, ঠিক সেভাবেই আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা) হুকুম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। 


    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post