খবরঃ
মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/gl5ik2im4j)
মন্তব্যঃ
বিগত হাসিনার শাসনামলে সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ ‘বৈধ আদেশদাতা’ ছিল ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রী’ যা ছিল হাসিনা নিজেই। হাসিনা এই সুযোগ লাভ করেছিল জনগণের তথাকথিত প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় তাত্ত্বিকভাবে বলা হয় জনগনই ‘রাষ্ট্রের শাসক’- যা পুরোপুরি একটি অবাস্তব চিন্তা। কারণ শাসক ও শাসিত দুটি আলাদা ও বিপরীতমুখী সত্তা। কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি গোষ্ঠী একই সাথে এই দুইটি অবস্থানে থাকতে পারে না। ফলে মূলত যেটা হয়, জনগণকে ‘তোমরা এই রাষ্ট্রের শাসক’ বলে একটা অলীক মোহে আবদ্ধ রেখে, শাসকরুপী গুটিকয়েক ব্যক্তিবর্গ এখানে কর্তৃত্ব করে ও জনগণকে নিপীড়ন ও বঞ্চিত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। এরা হয়ে যায় সামরিক বাহিনীসহ সকল রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কর্মচারীদের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বা ‘প্রভু’। সকল বৈধতা বা অবৈধতা দানকারী বা হালাল ও হারামের নির্ধারণকারী হয়ে তারা স্রষ্টার ক্ষমতা উপভোগ করে। আর সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে অন্য সকল কর্মচারী বা দেশের মানুষদেরকে, স্রষ্টার আসনে বসে তারা তাদের অন্যায় আদেশকে বা তাদের রচিত বিধি-বিধান ও সংবিধানকে পবিত্র হিসেবে মেনে চলতে বাধ্য করে।
এই অবস্থার সুযোগে বিগত হাসিনা সরকার, সামরিক বাহিনীকে দিয়ে গুম-খুন থেকে শুরু করে সকল অপরাধ করিয়েছে। তারাও বিনা বাক্য ব্যায়ে তথাকথিত ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ নামক এই প্রভুর(?) হুকুম নিষ্ঠার সহিত পালন করেছে। ফলে তাদের প্রভু খুশি হয়ে তাদেরকে দিয়েছে ‘প্রমোশন’ বা ‘পদক’ নামক বহুকাঙ্খিত ‘ইনাম’। ঠিক যেমন, ফেরাউনের বাহিনী ফেরাউনের হুকুমে বনি ইসরাইলের শিশু সন্তানদের হত্যা করার মত নিকৃষ্ট কাজ করেছিল বিনা বাক্য ব্যায়ে! অবশেষে যা হওয়ার তাই হলো! ফেরাউনের বাহিনী যেমন ফেরাউনের সাথে আল্লাহর গজবে নিমজ্জিত হয়েছিল, ঠিক তেমনি এই সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারাও পতিত হাসিনার সাথে এই বর্তমান দুর্ভোগে পতিত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে হয়তো হাসিনা নির্দেশে গুম-খুনে অংশ নেয়নি, কিন্তু তার অন্যায় সমূহের প্রতিবাদও করেনি। কিন্তু আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার) শাস্তির নিয়ম হলো ‘অন্যায়কারী’ ও ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অন্যায়ের বাধা দান না করে নীরব সাক্ষী’ উভয়কেই একই দুর্ভোগে পতিত হতে হয়।
তাদের এই দুর্ভোগ বা পরিণতি, এখনো যারা শাসকদের অন্যায় আনুগত্য করছে, তাদের জন্য একটি শিক্ষা। আর কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায়-সেটা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালাই ঠিক করতে পারেন! অন্য কেউ নয়! তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালাই একমাত্র ‘বৈধ আদেশদাতা’। এই বিশ্বজগতে তাঁর আদেশ অন্য সকল আদেশকে বাতিল ঘোষনা করে। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন, “আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে গিয়ে কোন (শাসকের) আনুগত্য নেই। আনুগত্য করতে হয় কেবল ন্যায়সঙ্গত কাজে” (ছহীহ বুখারী, হা/৭২৫৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪০)। আর ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ব্যতীত অন্য যে কোন শাসনতন্ত্র-সেটা গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র- সকল কিছুই তাঁর সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার দৃষ্টিতে অবৈধ। তাই এসব ব্যবস্থার শাসকদের আনুগত্য করাও অবৈধ। আর বর্তমান সামরিক কর্মকর্তাদের যেহেতু সামর্থ্য রয়েছে, এসব শাসকদেরকে অপসারণ করে আল্লাহর নির্দেশিত খিলাফত ব্যবস্থাপনা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার- সেটাই এই মুহূর্তে তাদের জন্য আল্লাহর নির্দেশিত সবচাইতে ‘বড় দায়িত্ব’। তাদের জন্য সবচাইতে ‘বড় আদেশ’। “The Ultimate Command’! আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন, “…জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (সহিহ বুখারী)
- মোঃ জহিরুল ইসলাম
