খবরঃ
মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে টানা চার দিন ধরে রাস্তায় আন্দোলন করছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। কখনো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায়, কখনো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বা হাইকোর্টের সামনের সড়কে কর্মসূচি পালন করছেন। সর্বশেষ আজ দুপুরের পর দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তাঁরা। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/jrofgxba58)
মন্তব্যঃ
শিক্ষকদের সুস্থভাবে জীবনধারণ করার জন্য যে বেতনভাতা পাওয়ার কথা তা তারা পান না। সকলেরই মনে প্রশ্ন যে জাতি গড়ার কারিগর এই শিক্ষকদের বেতন ভাতা কেন এত মানবেতর? রাষ্ট্র কেন সড়ক সৌন্দর্যমন্ডিত করাকে শিক্ষকদের জীবনধারণের ব্যবস্থা করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে? কেন ফ্লাইওভার, কালভার্ট, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণকে অধিক প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে যেখানে রাষ্ট্রের ছাত্র ছাত্রীদের নির্মাণ রাষ্ট্রের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা ছিল? মূলতঃ রাষ্ট্র এই শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পিছনে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করাকে একটা লাভজনক খাত মনে করে না। তাই জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় করা হয়। অথচ ব্রিটেন আমেরিকা, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে এর চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ ব্যয় করা হয়। অর্থাৎ বাইরের এই উন্নত দেশগুলো শিক্ষায় খরচ করাকে লাভজনক মনে করে যেহেতু তাদের নিজস্ব শিল্প আছে, তাই দক্ষ কর্মীর সবসময়ই প্রয়োজন হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফিনল্যান্ড বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর সমাজে অবসন্নতা, ড্রাগ, পর্ন, গান ভায়োলেন্স, পারিবারিক বন্ধনের অভাব, আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলো শিক্ষার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বাংলাদেশের মত রাষ্ট্র যাদের কোন উচ্চাভিলাষ নেই, তারা শিক্ষার পুরো প্রজেক্টকেই লস প্রজেক্ট মনে করে। অন্যদিকে উন্নত দেশ শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শুধু মুনাফা করার উদ্দেশ্যে শিক্ষায় বিনিয়োগ করে। সাধারণভাবেই প্রশ্ন চলে আসছে যে রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে কিভাবে শিক্ষাও একটা মুনাফা করার খাত হিসেবে বিবেচিত হল? রাষ্ট্র কেন সবকিছুর মধ্যেই মুনাফা খুঁজছে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের খেয়াল রাখা। কেন Trickle Down থিওরি (ধনী শ্রেণির আয় ও বিনিয়োগ বাড়লে তার সুফল ধীরে ধীরে নিচের শ্রেণির মানুষের কাছেও পৌঁছে যাবে) তাদের কাছে এত গ্রহণযোগ্য? রাষ্ট্র তো কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না।
একটা পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থায় সবকিছুকেই অর্থনৈতিক মানদন্ডে পরিমাপ করা হয়। শিক্ষা, চিকিৎসা, ন্যায় বিচার, মৌলিক অধিকার রক্ষা ইত্যাদি সবকিছুই দিনশেষে দেখা হয়, এখান থেকে কি পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হবে। তাই রাষ্ট্রও এখানে দেশি বিদেশি ব্যবসায়ীদের বা ধণিক শ্রেণীদের এসিস্ট্যান্ট বা কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করে। কোন বস্তুগত দৃশ্যমান লাভ ছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানসিক ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি তাদের মনোযোগের মধ্যেই পড়ে না।
পুঁজিবাদ যেখানে শিক্ষাকেও শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে দেখে, ইসলামি জীবনব্যবস্থায় তা এরকম না। ইসলামি জীবনব্যবস্থায় সকল কিছুর ভিত্তি হবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। শিক্ষার উদ্দেশ্য থাকবে দুটো- ১। ব্যক্তিত্ব গঠন ২। দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি। এই দুটি উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে সাজানো হয়। আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিশ্চিত হয়েই ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তারা বুঝতে পারে প্রত্যেকটা জ্ঞানের উতপত্তিস্থল আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। এভাবেই প্রত্যেকটা ছাত্র ছাত্রী ইসলামি ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়। সেই জ্ঞান থেকেই তারা নিজেদের মেধা ও উদ্যমকে বিকশিত করার লক্ষ্যে কাজ করে। তৈরি হয় দক্ষ ও মেধাবী জনগোষ্ঠী। খিলাফত শাসনামলের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে তৈরি হয়েছিল ইবন হাইথাম, আল খারিজমি, ইবন সিনা, আল বিরুনি, ইবন খালদুনের মত ছাত্ররা। এই ছাত্রদের তৈরি করার জন্য যারা শিক্ষা দিতেন তাদের কখনো খিলাফত শাসনামলে বাড়ি ভাড়া আর উৎসব ভাতা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করার প্রয়োজন পড়েনি। কারণ খিলাফত শাসনামলে প্রত্যেক নাগরিকেরই মৌলিক অধিকার পূরণের ব্যবস্থা থাকত। শিক্ষকরাও নাগরিক। তারা অর্থ উপার্জনের জন্য শিক্ষকতা করতেন না। তারা জানতেন আল্লাহর প্রতিশ্রুতি-
“আল্লাহ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যারা জ্ঞান অর্জন করেছে, তাদের মর্যাদা অনেক উচ্চ করবেন।”[ সূরা আল-মুজাদিলা (৫৮:১১)]
- জাবির জোহান
