খবরঃ
ইলোন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’ এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতারণা চক্রের নতুন অস্ত্র হয়ে উঠছে। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন ও পূর্ব তিমুরে এ স্যাটেলাইট সংযোগ ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে ‘স্ক্যাম সিটি’। যেগুলো রোমান্স স্ক্যাম (ভুয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে টাকা হাতানো), বিনিয়োগ প্রতারণা বা পিগ-বাচারিং, অবৈধ অনলাইন জুয়া ও ক্রিপ্টো জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং, মানব পাচার ও জোরপূর্বক শ্রম, মাদক পাচার, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, অবৈধ ব্যাংকিংয়ের মতো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তির এ অপব্যবহার এখন বাংলাদেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। এদিকে বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা বা অনলাইন প্রতারণার শঙ্কা প্রকাশ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সতর্কতা হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়ানো ও স্টারলিংকের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছেন তারা। (https://bonikbarta.com/bangladesh/YHfZxQw3IgIPImdW)
মন্তব্যঃ
প্রযুক্তিগত – পুঁজিবাদ(Techno-Capitalism) বা পুঁজিবাদ কর্তৃক প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নিয়ন্ত্রণ বারবার মানুষের জন্য বিপদের চিত্র উপস্থাপন করেই যাচ্ছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ইন্টারনেট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহ যেকোন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজতর করা এবং মানবকল্যাণের পরিবর্তে অর্থ উপার্জনের যন্ত্র(Money Making Machine) এবং অপরাধমূলক কার্যক্রমের অস্ত্র হয়ে উঠেছে। কারণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ধর্মকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে জীবনের উপর ধর্মের প্রভাবকে অস্বীকার করেছে। এই ব্যবস্থা বস্তুগত সুবিধা (Materialistic Benefit) এবং উপযোগবাদকে (Utilitarianism) যেকোন কর্মের মানদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও মানবিক মূল্যবোধগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কেবলমাত্র বস্তুবাদী (Materialistic) ও উপযোগবাদী (Utilitarian) মূল্যবোধ ধারণ করার ফলে “সুবিধা” ও “অবাধ মুনাফা” অর্জনই এই ব্যবস্থায় জীবনের প্রধান চালিকাশক্তি। আর ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, প্রশংসনীয়-নিন্দনীয় বিষয়ের সংজ্ঞাগুলোও এই সুবিধা ও মুনাফা অর্জনকে কেন্দ্র করেই নির্ধারিত হয় এবং বারবার পরিবর্তিত হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি ও মানদন্ডের আলোকেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে দেখা হয়। ফলশ্রুতিতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় স্টারলিংকের মত ইন্টারনেট প্রযুক্তি মানুষের সেবা ও জীবনকে উন্নত করার পরিবর্তে অনলাইন স্ক্যামার সিন্ডিকেট, স্ক্যামার নেটওয়ার্ক ও সাইবার স্ক্যাম শিল্পের মত অপরাধের সাম্রাজ্যগুলোকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে কতিপয় পুঁজিপতিগোষ্ঠীর জন্য বিপুল মুনাফা অর্জনের যন্ত্রে(Money Making Machine) পরিণত হয়েছে। একইভাবে চ্যাটজিপিটির মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে আত্বহত্যা করার কৌশল শিখাচ্ছে এবং যৌন উদ্দীপক কনটেন্ট বা পর্ণ কন্টেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাইক্রোসফট, গুগল ও অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানিগুলো গাজায় গণহত্যায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এআই ভিত্তিক লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ প্রযুক্তি সরবরাহ করে বিপুল মুনাফা করছে। এভাবে পশ্চিমা পুঁজিবাদী আদর্শ প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে বস্তুগত সুবিধা ও মুনাফা অর্জনের আকাঙ্ক্ষার সাথে সংযুক্ত করে মানুষকে কলুষিত(Corrupted) করছে। ফলশ্রুতিতে একদিকে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে কিন্তু অন্যদিকে তা সমাজ ও পুরো একটা সভ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস করছে।
অথচ মূল সমস্যা প্রযুক্তিতে নয়, বরং একটা আদর্শের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির উপরেই প্রযুক্তির ভালো ও মন্দ নির্ভর করে । পুজিবাদী আদর্শ যেহেতু সবকিছুর মত প্রযুক্তিগত উন্নয়নকেও বস্তুগত মূল্যবোধ ও মুনাফার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখে, যার ফলে এই ব্যবস্থার অধীনে প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে কখনোই মানবতার কল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
একমাত্র ইসলামী আদর্শের অধীনেই প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব। কারণ ইসলাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে দেখে না বরং মানবতার কল্যাণ ও এই কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে গোটা মানবজাতির উপর ইসলামের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক উচ্চাকাংখার অংশ হিসেবে দেখে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “তিনিই সে সত্তা যিনি তার রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যেন তা অন্য সব দ্বীনের উপর বিজয়ী লাভ করে” (সুরা তওবাঃ ৩৩)। ফলশ্রুতিতে আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র অন্য সকল দ্বীনের উপর ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করার আকাঙ্ক্ষার সাথে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে সংযুক্ত করবে। এ লক্ষ্যকে মাথায় রেখে খিলাফত রাষ্ট্র বাধ্যতামূলকভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করবে এবং তার রাষ্ট্রের নাগরিকদেরকেও তা করতে উৎসাহিত করবে। কারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগতভাবে অন্য কোন বিদেশী রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল থাকা শরীয়াহ অনুমোদিত নয়। ফলশ্রুতিতে খিলাফত রাষ্ট্রকে অবশ্যই ইন্টারনেট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্টিলথ প্রযুক্তি, ন্যানো প্রযুক্তি, মেকাট্রনিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পাশাপাশি পারমাণবিক প্রযুক্তি তৈরির জন্য সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রযুক্তিখাতে স্বনির্ভর হতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারও শরীয়াহ নির্ধারিত সীমারেখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে যা নীতি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধকে শক্তিশালীভাবে ধারণ করবে। আর প্রযুক্তির উন্নতির পেছনে মুনাফার উদ্দেশ্য থাকবে না বিধায় তা উম্মাহর জীবনকে উন্নত করবে এবং মানবজাতির সার্বিক কল্যাণে ব্যবহৃত হবে যা বিশ্বের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে ইসলামী আদর্শের প্রতি দৃঢ়ভাবে আকৃষ্ট করবে। খিলাফত রাষ্ট্র বৈজ্ঞানিক আবিস্কার ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে ব্যবহার করবে বিশ্বব্যাপী দাওয়া বহন ও ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসেবে যার ফলে কার্যতই বিশ্ব দরবারে ইসলাম একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
- কাজী তাহসিন রশীদ
