খবরঃ
সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো সুদানি আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) সমর্থন দিয়েছে। (https://www.dhakatoday.com/news/59884/ইয়েমেন-থেকে-সুদান:-ঘরে-ঐক্যের-কথা,-বাইরে-অশান্তি-ছড়াচ্ছে-আরব-আমিরাত)
মন্তব্যঃ
সুদানের দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশের শহরে নির্বিচারে গণহত্যা চালানো র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আরব আমিরাত কি উদীয়মান স্বাধীন আরব শক্তি যারা নিজেদের ভূ-খন্ডের বাহিরে কর্তৃত্ব ছড়িয়ে দিতে সক্ষম? স্বাভাবিক কান্ডজ্ঞান এবং নূন্যতম তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান সম্পন্ন যেকোন ব্যাক্তি ইন্টারনেটে সামান্য সার্চ করলেই আরব আমিরাতের তথাকথিত শক্তিমত্তার ফাঁকা বুলি অনুধাবন করতে পারেন। আরব আমিরাত কি আদৌ কোন স্বাধীন রাষ্ট্র? কোন দেশে উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি সেই দেশটির প্রকৃত স্বাধীনতা কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আরব আমিরাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের মত তিন তিনটি উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ(https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_foreign_military_bases_in_the_United_Arab_Emirates)। এই ঘাঁটিগুলো ব্যবহার করে উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রগুলো মধ্যপ্রাচ্যে তাদের দখলদারিত্ব বজায় রাখছে এবং মুসলিমদের হত্যা করছে। এছাড়াও, আরব আমিরাতের সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে অফিসারদের একটি অংশ ভাড়াটে সৈন্য যাদের বেশীর ভাগ আবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। যার ফলে আরব আমিরাতের সামরিক নেতৃত্ব ঐতিহাসিকভাবে উপনিবেশবাদীদের নিয়ন্ত্রণাধীন। ইতিপূর্বে আরব আমিরাত আফগানিস্তান এবং ইয়েমেনে উপনিবেশবাদী শক্তির সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ https://en.wikipedia.org/wiki/United_Arab_Emirates_Armed_Forces)। সুতরাং, সুদান গণহত্যায় আরব আমিরাতের সম্পৃক্ততাকে উপনিবেশবাদীদের ষড়যন্ত্রের লেন্সে না দেখলে প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে না। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার মূল শক্তি আমেরিকার অন্যতম জিওপলিটিকাল কৌশল হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ শক্তি খিলাফত রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে দীর্ঘায়িত করা। যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক স্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বক্তব্যে খিলাফতের পুনঃপ্রবর্তন নিয়ে তাদের উদ্বেগের মাত্রা অনুমান করা যায়। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ বাংলাদেশে পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান, dw.com, মার্চ ১৭, ২০২৫। ১৯২৪ সালে অফিসিয়ালি খিলাফত রাষ্ট্রকে ধ্বংস এবং উপর্যুপরি সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আগ্রাসণের পরেও মুসলিম উম্মাহ ইসলামি জীবন ব্যবস্থা বা খিলাফতের দাবি ছেড়ে দেয় নাই। বরং, খিলাফতের দাবিতে পূর্ব থেকে পশ্চিমের সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ। ২০১৩ সালে পিউ রিসার্সের ২৩ টি দেশের মুসলিমদের উপর পরিচালিত জরিপে মুসলিমদের মধ্যে পরিপূর্ণ ইসলাম শাসন ব্যবস্থার অধীনে থাকার তীব্র আকাঙ্খা লক্ষ করা যায়। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃhttps://www.pewresearch.org/religion/2013/04/30/the-worlds-muslims-religion-politics-society-beliefs-about-sharia/। বর্তমানে শুধু মুসলিমদের মধ্যে নয় অমুসলিমদেরও মাঝেও ইসলামী শাসন ব্যবস্থার প্রতি ইতিবাচক ধারনা লক্ষ করা যাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের এই আকাঙ্খার ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র জন্ম নেয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই আমেরিকা, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ভূ-খন্ডগুলোতে কৃত্তিমভাবে দ্বন্ধ সংঘাত তৈরি করে বৃহৎ মুসলিম ভূমিগুলোর শক্তিশালী খিলাফত রাষ্ট্র হওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সুদান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়ামেনসহ মুসলিমদেশগুলোর রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ভেঙে টুকরা টুকার করে দুর্বল করা আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবসহ মুসলিম ভূখন্ডগুলোর শাসকেরা সচেতনভাবে উপনিবেশবাদী আমেরিকার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে। এসব নির্বোধ শাসকদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ আমাদের সতর্ক করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “মানুষের উপর বিশ্বাসঘাতকতার এমন বছর আসবে, যখন মিথ্যাবাদীকে সৎ এবং সৎ ব্যক্তিকে মিথ্যাবাদী হিসেবে গণ্য করা হবে; বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বস্ত এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে গণ্য করা হবে; এবং ‘রুয়াইবিদা’-রা জনগণের বিষয়গুলো নির্ধারণ করবে।’ সাহাবাগণ (রা.) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্, “রুয়াইবিদা কি?” তিনি বললেন, সে সকল নির্বোধ ও অযোগ্য শাসক যারা জনগণের ব্যাপারে কথা বলবে” [ইবনে মাজাহ্]।
মুসলিম ভূখন্ডগুলোর এই সকল নির্বোধ শাসকদের কাছ থেকে মুসলিম উম্মাহ’র কোন সমস্যার সমাধান আশা করা যায় কি? মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে উপনিবেশবাদী আমেরিকার ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে হলে মুসলিমদের এমন একটি ব্যবস্থা প্রয়োজন যা মুসলিমদের রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন “ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন ঢাল, যার অধীনে তোমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদেরকে রক্ষা কর” [সহীহ্ মুসলিম]। সুতরাং, খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়াও উচিত মুসলিমদের একমাত্র রাজনৈতিক এজেন্ডা।
- মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম
