খবর:
সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন ‘ক্ষমতায় এলে কর্মজীবী নারীদের কর্মঘণ্টা ৮ থেকে কমিয়ে ৫ ঘণ্টা করা হবে।’ তার ভাষায়, ‘একজন মা সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, লালন–পালন করছেন এবং পেশাজীবী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আমারও ৮ ঘণ্টা, তারও ৮ ঘণ্টা—এটা কি অবিচার নয়?’ নারীর প্রতি ‘অবিচার’-এর প্রতিকার হিসেবে তার এই বক্তব্য সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নারীর প্রতি ন্যায়বিচার কি সত্যিই কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া, নাকি কর্মক্ষেত্রে তাঁর সমান সুযোগ, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা?(https://www.prothomalo.com/opinion/reaction/xdsioo2873)
মন্তব্যঃ
নারীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেয়ার প্রস্তাবনাকে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আবেগকে নিজেদের পক্ষে আনতে বলা হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি মূল সমস্যার উপর আলোকপাত করা হয়নি। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরুষের। নারী আট কিংবা পাঁচ কেনো এক ঘন্টাও তার ভরণপোষণের জন্য শ্রম দিতে বাধ্য নয়। কিন্তু কেন নারী পরিবার সামলানোর পরও কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছে? এ বিষয়টি পর্যালোচনা করা জরুরী। অন্যদিকে, সেকুলাররা এটিকে ইসলামকে আক্রমণের সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। সেকুলার পুঁজিবাদী আদর্শের ধারক বাহকেরা নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর এই প্রস্তাবকে “নারীর ক্ষমতায়ন” বা “নারীর স্বাধীনতা”র অন্তরায় মনে করছেন। বিষয়টির প্রকৃত পর্যালোচনা প্রয়োজন। -- “নারী স্বাধীনতা” বা “নারীর ক্ষমতায়ন” যে শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রে গেলেই পূরণ হয়, এরকম একটা ধারণা কিভাবে বর্তমান সমাজে এল? ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রবল অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে নারীকে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত করা হয়। কিন্তু এখানে প্রশ্ন চলে আসে যে অর্থনৈতিক মন্দা দূরীকরণের সাথে স্বাধীনতার কি সম্পর্ক? এই উত্তর পেতে হলে আমাদের ইউরোপের রেনেসাঁর পূর্বের এবং পরের বাস্তবতার দিকে চোখ ফেরাতে হবে। রেনেসাঁর পূর্বে চার্চের পাদ্রিরা নারীদের “পাপের সূচণা” বলে মনে করত। রেনেসাঁর পরেও ইউরোপিয়ানদের এই ধারণার গুণগত কোন পরিবর্তন ঘটেনি। রুশো, পিথাগোরাস, কান্ট, ফ্রয়েড, ডারউইন প্রভৃতি দার্শনিক বিজ্ঞানীদের কাছে নারী ছিল “অর্ধমানব” কিংবা “সেকেন্ড ক্লাস হিউম্যান”। পরবর্তীতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনৈতিক মন্দা দূর করতে এই “অর্ধমানব”দের সাহায্য সরাসরি চাওয়ার চেয়ে “নারী স্বাধীনতা” বা “নারীর ক্ষমতায়ন” শব্দগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে নারীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত করল। সেক্যুলার রাষ্ট্রের অর্থনীতি সামাল দেয়ার ব্যর্থতাকে দূর করার নতুন উপায় বের হল নারীকে নিষ্পেষণের মাধ্যমে। কম মজুরিতে কাজ করিয়ে নেয়া, সেক্স অবজেক্ট হিসেবে সমাজে উপস্থাপন করা ইত্যাদি সবকিছুই সম্ভব হয়ে গেল শুধুমাত্র “ক্ষমতায়ন” আর “স্বাধীনতা” নামের শব্দ দুটো ব্যবহার করে। মূলতঃ সেক্যুলার পুঁজিবাদী সিস্টেম তার মুনাফা অর্জনের জন্য বরাবরই যারা পুঁজিবাদী দৃষ্টিতে দুর্বল যেমন দরিদ্র, কালো এদের উপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নারী ছিল নতুন সংযুক্তি।
অন্যদিকে ইসলাম ১৪০০ বছর ধরে খিলাফত শাসন ব্যবস্থার অধীনে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধরে রাখতে সক্ষম ছিল। যদিও এর মাঝে দুর্ভিক্ষ, বিভিন্ন বাস্তবতায় বিভিন্ন খলিফার সময়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ছিল। কিন্তু তবুও ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে কাউকে তার দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হতে দেয়নি। কারণ খলিফা এবং তার দায়িত্বে থাকা নারী-পুরুষ সকলের দায়িত্ব এবং ভূমিকা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত ছিল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পুরুষকে পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব দিয়েছেন। খিলাফত রাষ্ট্র তাই বরাবরই রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে নাগরিকদের নানাভাবে সহায়তা করেছে এবং নিশ্চিত করেছে যে পুরুষরা তাদের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাদের দায়িত্ব যেন ন্যায়ের সাথে পালন করতে পারে। খিলাফত রাষ্ট্রে নারীরা ব্যবসা করেছে, চাকরি করেছে কিন্তু কখনোই অভিভাবকহীন অবস্থায় নিরাপত্তা লাভের জন্য অর্থ বা সম্পদকে অভিভাবক বানানোর কথা চিন্তা করে নাই। যদি কোন নারীর বাবা, স্বামী, ভাই, চাচা – এরা কেউ না থাকে, তাহলে খিলাফত রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেবে। এই দায়িত্ব কোন দয়া থেকে নেবে না। এটা নারীসহ সকল অসহায় নর-নারীর শাসকের উপর আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার। এই অধিকার সম্পর্কে সকলেই সচেতন ছিলেন বলেই মরুভূমিতে থাকা অসহায় মা নিজের সন্তানদের খেতে দিতে না পেরে খলিফা ওমরকেই দোষারোপ করছিলেন। কারণ খলিফা হচ্ছেন উম্মাহর অভিভাবক।
- জাবির জোহান