খবর:
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংকের স্পনসর শেয়ারহোল্ডার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের মূল্য এখন শূন্য হিসেবে গণ্য করা হবে। কেউই কোনও ক্ষতিপূরণ পাবেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গভর্নর জানান, এসব ব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে নন-ভায়েবল বা অননুমোদনযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে এবং প্রতিটি ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ করেছে।
(https://www.banglatribune.com/business/921794/৫-ব্যাংকের-শেয়ার-এখন-শূন্যমূল্যের-কেউ-ক্ষতিপূরণ)
মন্তব্য:
দেশের ব্যাংকিং খাত হল পুঁজিবাদ ও দুর্বৃত্ত পুঁজিপতিদের প্রাণ ভোমরা। জনগনের কষ্টার্জিত অর্থকে ব্যাংকিং খাত নানান প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে ‘আমানতের নামে’ তাদের করায়ত্ব করে। এরপর সেই অর্থ নামে-বেনামে নামমাত্র জামানত নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়। এটাই মূলত ক্ষমতার আশেপাশে থাকা পুঁজিপতিদের মূল সম্বল যা নিয়ে তারা ব্যবসায়ে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে ও টাকার পাহাড় বানায়। কিন্তু জনগনের আমানতের এই টাকা তারা অধীকাংশ ক্ষেত্রে ফেরত দেয় না। যার ফলে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের চক্রে আটকা পরে। তখন সরকার জনগনের ট্যাক্সের টাকায় কিংবা নতুন টাকা ছাপিয়ে জনগনের ক্রয়ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সেই ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রেখে মূলত সেই দুর্বৃত্ত পুঁজিপতি ও তাদের অবৈধ অর্থের সাম্রাজ্যকে রক্ষা করে। এভাবেই চলে আসছে সরকার পরম্পরায়। আর ব্যাংকিং খাতের ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ সিস্টেমের কারণে ও সরকারের পলিসি সাপোর্টের কারণে পুঁজিবাদি অর্থনীতির এই মহা-বাটপারি দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায়। কিন্তু এরপরও যখন তা প্রকাশ্যে চলে আসে তখন সরকার ও শাসকগোষ্ঠী আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের দিকে অভিযোগের তীর তাক করে তাদেরকেই অসচেতনতার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে আর নির্লজ্জের মত বলে “কেউ ক্ষতিপূরণ পাবে না”।
আমানতকারীরা আইন অনুসারে ২ লাখের কম ডিপোজিটের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘আনুপতিক হারে’ আগে টাকা ফেরত পাবে এবং ব্যাংকগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা কোন ক্ষতিপূরণ পাবে না। এই জঘন্য অপরাধের মূল অপরাধী হল কোম্পানির সীমিত দায়ের আইনী ভিত্তি; অর্থাৎ, দেনা পরিশোধে ব্যাংকের দায় তার ইস্যুকৃত শেয়ারের লিখিত মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ। এই সীমাবদ্ধ দায় দেশের প্রচলিত আইনী কাঠামো ও ব্যাংকিং কোম্পানি আইন দ্বারা স্বীকৃত ও আরোপিত। যার ফলে, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করলেও কোন প্রতিকার বা ক্ষতিপূরণ পাবে না, অথচ, ব্যাংকের হাজার কোটির ঋণ-খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কখনো কোন ব্যবস্থা নিয়েছে তা জনগন কখনো দেখেনি কিংবা শোনেনি। মূলত: সেকুলার পুঁজিবাদি শাসনব্যবস্থার শাসকরা হল আমানতের খেয়ানতকারী। তারা দেশের জনগনের গনমালিকানাধীন সম্পদ, রাষ্ট্রমালিকানাধীন সম্পদ, জনগনের ট্যাক্সের অর্থ, দেশের অভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক নিরাপত্তা সবই কোন অনুশোচনা ও লজ্জা অনুভব করা ছাড়াই ক্রমাগত খেয়ানত করে। শুধু তাই নয়, জনগনের কষ্টার্জিত অর্থ আক্ষরিক ‘আমানত’ হিসেবে গ্রহণ করে লোপাটকারীদেরকে রক্ষা ও শক্তিশালী করে সেই অর্থও খেয়ানত করে তারা। রাসূলুল্লাহ (সা) যথার্থই বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি; ….তার কাছে কোন কিছু আমানত রাখা হলে তা সে খেয়ানত করে। (সহীহ আল বুখারী)।
ইসলামী খিলাফত শাসনব্যবস্থায় কোন প্রতিষ্ঠানের দায় কখনোই তাদের ইস্যুকৃত শেয়ারের লিখিত মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিষ্ঠান ও এর কর্নধারদেরকে অবশ্যই তাদের সমুদয় আর্থিক অঙ্গিকার পূরণ করতে হবে। আর্থিক দায় পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানকে নয় বরং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে (ও প্রমান সাপেক্ষে তাদের অপকর্মের সহযোগী ও সুবিধাভোগীদের) তাদের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ জব্দ করে দেওলিয়া ঘোষনা করা হবে এবং ভবিষ্যতে বাদবাকি দেনা পরিশোধ করা ব্যাতিত নতুন কোন সম্পদের মালিক হতে পারবে না। এটা হল দুনিয়ার হিসাব, যা খিলাফত রাষ্ট্র সমাধা করবেন যা অর্থ আত্মসাৎকারী, খেয়ানতকারী ও খেলাপিদের ব্যাপারে প্রযোজ্য। আর আখিরাতের চূড়ান্ত ফয়সালা করবেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ, যিনি হিসাব গ্রহনে অতিশয় সূক্ষ্ম ও অত্যন্ত কঠোর। যার ফলে, খিলাফত রাষ্ট্রের নাগরিকদের অর্থ-সম্পদ অর্জন, সংরক্ষন ও লেনদেনে একটি অত্যন্ত নিরাপদ পরিবেশ বিরাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।
- রেদওয়ান আহমেদ
