তিন বিচারপতিকে শোকজ করেননি প্রধান বিচারপতি

 


খবরঃ

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তিনজন বিচারপতিকে কোনো শোকজ বা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেননি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবলমাত্র মামলা সংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন যা আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার একটি নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। ‘বিপুল সংখ্যক জামিন দেওয়ায় হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতিকে শোকজ করে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে মঙ্গলবার এমন তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।  এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ‘২৮ অক্টোবর কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে বিপুল সংখ্যক জামিন প্রদান করায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন জন বিচারপতিকে শো-কজ করে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এবং ফোন করে বিচারপতি আবু তাহের সাইফুর রহমান, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি জাকির হোসেনকে এ নোটিশ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।’ (https://www.banglanews24.com/law-court/news/bd/1619878.details)

মন্তব্যঃ

প্রকৃত ঘটনাটি হচ্ছে, একজন বিচারপতি একটি কমন অর্ডারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ৮০০ নেতাকর্মীকে জামিন দিয়েছেন। মামলাগুলো অধিকাংশই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ভাঙচুর ও মারামারির মামলা। আসামীদের নাম মামলাগুলোর এফআইআর-এ উল্লেখিত ছিল না—শুধুমাত্র এই গ্রাউন্ডে এত বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে একটি কমন অর্ডারে জামিন দেওয়া হয়েছে। আসামীরা গুরুত্বপূর্ণ মামলায় গ্রেফতার হওয়া সত্ত্বেও হাইকোর্ট বিভাগের উক্ত বিচারপতি এই আসামীদের গ্রেফতারের কারণ সংক্রান্ত পুলিশ প্রতিবেদন (Police Forwarding) ও রিমান্ড রিপোর্টগুলো পড়ে দেখার প্রয়োজন অনুভব করেননি। অথচ, এই বিচারপতিরা আওয়ামী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মামলায় জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কুণ্ঠিত ছিলেন। এদের মধ্যে একজন বিচারপতি তো আদালতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের প্রতি অত্যন্ত অপমানজনক ও আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহারের জন্য সুপরিচিত। বিশেষত হি-য-বু-ত তা-হ্‌-রী-র এর নেতাকর্মীদের মিছিল-মিটিং ও পোস্টার-লিফলেটের মত অতি নগণ্য মামলায় এই বিচারপতিরা জামিন দিতে চাইতেন না এই কারণে যে, ওগুলো সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ সংগঠনের মামলা। অথচ এখন তারা একই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আরেকটি সংগঠনের মামলায় অতি উৎসাহী হয়ে মামলার মেরিট বিবেচনা না করেই জামিন দিয়ে দিচ্ছেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, জামিন প্রদানকারী বিচারপতিদের কাছে ব্যাখ্যা তলবের কোনো প্রশাসনিক এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির নেই, কারণ বাংলাদেশের সংবিধানে কিংবা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অনুসৃত রুলস অফ বিজনেসে প্রধান বিচারপতিকে এই ধরনের প্রশাসনিক ব্যাখ্যা তলবের এখতিয়ার দেয়া হয়নি। শুধু বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাতেই নয়, এই দুর্বলতা ব্রিটিশ বিচারব্যবস্থা তথা কমন ল সিস্টেমে সর্বত্রই আছে। হাইকোর্টের বিচারপতিদের প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে কেবল আপিল বা রিভিশন করা যেতে পারে, কিন্তু তাদেরকে প্রশাসনিকভাবে দায়বদ্ধ করার মতো কোনো ম্যাকানিজম এই বিচারব্যবস্থায় নেই। বিচারপতিদের তথাকথিত স্বাধীনতার নামে এধরনের স্বেচ্ছাচারিতার পথ খোলা রাখা হয়েছে। অথচ বিচারপতিদের তথাকথিত স্বাধীনতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং বিচারপতি বা বিচারকদের স্বাধীনতা কেবল ন্যায়বিচার প্রদানের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়। বস্তুত এই ধরনের জবাবদিহিতা ও মনিটরিং-এর অভাবেই ব্রিটিশ কমন ল সিস্টেম পৃথিবীর কোথাও ন্যায়বিচার দিতে পারছে না। ব্রিটিশ বিচারব্যবস্থার এই অন্তর্নিহিত দুর্বলতার চেয়েও আরো গুরুতর প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে প্রচলিত এই বিচারব্যবস্থা বাংলাদেশের জনগণের বিশ্বাস, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করে না, প্রতিফলিতও করে না। বিচার বিভাগে ন্যায়বিচার তো পাওয়াই যায় না, মামলার নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লেগে যায়। বিচারপ্রার্থীরা পদে পদে হয়রানি, দুর্নীতি ও অবিচারের শিকার হয়। আদালতগুলো হয়ে উঠেছে বিচারক ও আইনজীবীদের টাকা কামানোর ক্ষেত্র, বিচার যেখানে টাকায় বিক্রি হয়।

বাংলাদেশের জনগণের সামগ্রিক বিশ্বাস, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে একমাত্র ইসলামী বিচারব্যবস্থা। ইসলামী বিচারব্যবস্থায় ন্যায়বিচার (আদল) ও জবাবদিহিতা (মাস'উলিয়্যা) মূল নীতির অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুর‘আন-এ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যারা বিচার করবে, তারা যেন ন্যায়ের সঙ্গে বিচার করে” [সূরা আন-নিসা ৪:৫৮]। এজন্য ইসলামী শাসনব্যবস্থায় কাজি বা বিচারক যদি পক্ষপাতমূলক রায় দেন, তিনি শারঈভাবে গোনাহগার এবং প্রশাসনিকভাবে শাস্তিযোগ্য, এমনকি তাঁর পদ থেকে অপসারণযোগ্য—যেমনটা দেখা যায় খলিফা উমর (রা.)-এর আমলে বিচারকদের ওপর নিয়মিত পরিদর্শন ও জবাবদিহির ব্যবস্থা ছিল [আল-মাওয়ারদি, আহকামুস সুলতানিয়া]। ব্যর্থ ব্রিটিশ বিচারব্যবস্থাকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করে খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে ইসলামী বিচারব্যবস্থা চালু না করা পর্যন্ত দেশের জনগণ কখনোই ন্যায়বিচার পাবে না।

    - রাশিদ হাসান মেহেদি

Previous Post Next Post