বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সমরূপ ছাড় চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন

 

খবরঃ

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ এগ্রিমেন্ট বা পাল্টা শুল্ক চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, সয়াবিন, তুলা, উড়োজাহাজ ক্রয়সহ বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রকে এসব প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর এখন একই ধরনের সুবিধা আদায়ে তৎপর হয়েছে জাপানসহ বিভিন্ন দেশ। সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো বাংলাদেশকে দরকষাকষির টেবিলে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিহ্নিত নন-ট্যারিফ, নিয়ন্ত্রক, অন্যান্যসহ মোট ১৩টি চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ-ইইউর দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। (https://www.bonikbarta.com/international/f0YGgvfEFuQFHzRF)

মন্তব্যঃ

একেক অঞ্চলের উৎপাদন ও চাহিদার স্বাভাবিক প্রয়োজনে অন্য অঞ্চল বা দেশের মানুষের সাথে পণ্যে, কাঁচামালের মধ্যে বিনিময় বা বাণিজ্য হয়। এজন্য ঐতিহাসিকভাবেই নানা ট্রেড রুট ও ট্রেড রুলস বলবত ছিল। ফলে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন, বাণিজ্য পথসমূহ এবং সর্বোপরী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মকানুনগুলোর উপর মানুষের জীবন ও প্রয়োজন পুরণের ও সর্বোপরী অর্থনীতি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশের শাসক এমন বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করবে যাতে করে তার দেশের মানুষের তথা কৃষক, ভোক্তা ও ব্যবসায়ী সবার স্বার্থরক্ষা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সত্য যে আমাদের দেশের শাসকদের বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এর বিপরীতটাই প্রতীয়মান হয়। 

বিগত সরকারগুলো আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তিকে খুশি করতে গিয়ে আমাদের নিজস্ব কাঁচামাল নির্ভর শিল্প যেমন পাট, চামড়া, দেশীয় হস্তচালিত তাঁত ইত্যাদিকে প্রায় ধ্বংস করেছে। অন্যদিকে, তারা দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের সাথে যুক্ত পণ্যগুলোর দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে বরং আমদানীকে উৎসাহিত করেছে। ফলে দেশ চিনি, চাল, গম, ভোজ্য তেল ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানী নির্ভর হয়ে পড়েছে। এভাবে ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী এসব কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য খাত হতে বেকার হওয়া ও ক্ষতিগ্রস্থ অসংখ্য মানুষকে নিয়ে এসে অত্যন্ত কম মূল্য সংযোজনকারী খাত গার্মেন্ট উৎপাদন বাণিজ্যকে বড় করা হয়। যা দ্বারা মূলত রপ্তানীকারক দেশের থেকে আমদানীকারক দেশই বেশী উপকৃত হয় (কারণ এত কম মূল্যে কোথাও তারা এটি পায় না)। সরকার এখন সেই বাণিজ্যের সুরক্ষার নাম করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এমনসব চুক্তি সাক্ষর করেছে যার ব্যপক প্রভাব মানুষের জীবনে ইতিমধ্যে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধিক মূল্যে কৃষি পণ্য যেমন গম, সয়াবিন ইত্যাদি আমদানীর ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েছে। আবার যে গার্মেন্ট শিল্পের সুরক্ষার নাম করে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ নিয়ে দর কষাকষি হলো সেই শিল্পের কাঁচামাল যেমন তুলা, জ্বালানী যেমন এলএনজি তাদের কাছ থেকে আমদানী করার ফলে অতিরিক্ত খরচের কারণে গার্মেন্ট শিল্পই উৎপাদন সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এছাড়া নানা বাণিজ্য বহিঃর্ভুত নীতিসুবিধা যেমন আইএলও কনভেশনে স্বাক্ষর করা, বন্দর বিদেশীদের হাতে দেয়া তথা খরচ বাড়ানো ইত্যাদিও ব্যবসায়ীদের জন্য বিশাল বোঝা আকারে আসছে। এসব বাণিজ্য চুক্তির আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশের অন্যান্য ভুরাজনৈতিক আগ্রাসনের দিকগুলো এখানে আলোচনায় বাদই রাখলাম। 

ফলে আমাদের শাসকদের পরাধীনতার ও নতজানুতার সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র যা আদায় করে নিয়েছে তা এখন তাদেরই মত অন্যান্য ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোও নিতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। ইউরোপীয় রেনেসাঁর পর পশ্চিমাদের নেতৃত্বের ঔপনিবেশিক বিশ্বব্যাবস্থায় এভাবেই তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নামে সারা বিশ্বের সম্পদগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। আর আমাদের মত দেশগুলোর অযোগ্য, নির্বোধ তথা রুয়াইবিদাহ শাসকরা এই উপনিবেশবাদী শক্তিগুলোর স্বার্থেই কাজ করে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তাআলা এরকম লোকদের হাতে মানুষের সম্পদের দায়িত্ব দিতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন,মানুষের সাথে অবাধ ও ন্যায়ভিত্তিক বাণিজ্য  “আর যে সম্পদকে আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য জীবন-যাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিও না…”(সুরা নিসা ৫)।

কেবলমাত্র ইসলামই সেই শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করতে পারে যা অর্থনীতি ও বাণিজ্যে একটি নেতৃত্বশীল দেশ গঠন করতে পারে। কারণ ইসলামে বাণিজ্যনীতি দরকষাকষির ভিত্তিতে নয় বরং আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ওহীর ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। খিলাফত রাষ্ট্র অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোকে একইভুমি হিসেবে দেখবে।  এছাড়া যেসব অমুসলিম দেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি থাকবে তাদের সাথে নাগরিকদের ও দেশের স্বার্থরক্ষা করে বাণিজ্য হবে। এসব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অপরপক্ষ যদি কোন ডিউটি বা ট্যাক্স আরোপ করে শুধু তার সমপরিমাণ ছাড়া খলিফা আর কোন ট্যাক্স আরোপ করতে পারবে না। ইসলাম অনুযায়ী ঐসব দেশের সাথে ঐসব পণ্য বাণিজ্য করা যাবেনা যার ফলে কৌশলগত দিক থেকে সেইসব দেশ শক্তিশালী অবস্থানে চলে যায় অথবা খিলাফত রাষ্ট্রের কৌশলগত সক্ষমতা কমে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, “….এবং আল্লাহ কক্ষনো মু’মিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে (জয়লাভের) পথ করে দেবেন না” (সুরা নিসা: ১৪১)।


    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন 

Previous Post Next Post