খবরঃ
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইসলামি বক্তা জাকির নায়েককে আপাতত বাংলাদেশে আসার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, একটি প্রতিষ্ঠান জাকির নায়েককে ২৮ ও ২৯ নভেম্বর দুই দিনের জন্য ঢাকায় আনতে চায়। ঢাকার বাইরেও যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তবে জাকির নায়েকের ঢাকায় আসা নিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনা চলছে। আজকের সভায় আলোচনা হয়, জাকির নায়েক বাংলাদেশে এলে প্রচুর জনসমাগম হবে। জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের প্রয়োজন হবে। জাকির নায়কের ঢাকায় আসাকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে এত সদস্য সেখানে মোতায়েনের সুযোগ নেই। সবাই এখন নির্বাচনমুখী। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় নির্বাচনের পর তিনি ঢাকায় আসতে পারেন। তবে নির্বাচনের আগে নয়।
(https://www.prothomalo.com/bangladesh/s6iqv70bvv)
মন্তব্যঃ
ভারতীয় সরকারের অভিযোগের মুখে জনপ্রিয় এই ইসলামী বক্তাকে বাংলাদেশে আসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের ভারত নতজানুতাকে আবারও স্পষ্ট করেছে। প্রতারণাপূর্ণভাবে যুক্তি দেখানো হচ্ছে যে, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে যে পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের প্রয়োজন তা এই মূহুর্তে মোতায়েনের সুযোগ নেই। অথচ, কয়েকদিন আগেই আমরা দেখেছি আর্মি স্টেডিয়ামে আতিফ আসলাম আর রাহাত ফতেহ আলী খানের কনসার্ট, বসুন্ধরায় Let’s Vibe Art & Music Festival, Yolo Fest Rock Concert ইত্যাদি। সেখানে বেশ ভালভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে মোতায়েনের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে। যালিম হাসিনার পতনের পর আমরা দেখেছি, বিএনপির বিভিন্ন বৃহৎ জনসভা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিশাল জনসভা, হেফাজতে ইসলাম এর মহাসমাবেশ, ‘মার্চ ফর গাজা’ পদযাত্রা, ইত্যাদির মত ঘটনা যেখানে সমাগম হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের। সুতরাং বড় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের নাই সেটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা।
মূলত, নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ইসলামপ্রিয় জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব না দিয়ে মার্কিন-ভারতকে তুষ্ট রাখতে চায়। যেমন, জাকির নায়েকের ঢাকায় আগমনের খবর চাউর হলে ভারত নড়েচড়ে বসে। জাকির নায়েকের সম্ভাব্য এই ঢাকা সফর নিয়ে ৩০ অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলে, “জাকির নায়েক একজন পলাতক আসামি। তিনি ভারতে ওয়ান্টেড। তো আমরা আশা করি তিনি যে দেশেই যান, ওই দেশ তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা এবং আমাদের নিরাপত্তা উদ্বেগকে বিবেচনায় নেবে।” এর জবাবে তথাকথিত ভারত বিরোধী অন্তর্বর্তী সরকার এটা বলার সাহস করেনি যে, ভারত কেন খুনী হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং সে একজন ওয়ারেন্টযুক্ত আসামী, তাকে কেন হস্তান্তর করা হচ্ছে না? বাংলাদেশের শাসকদের এতটুকু সাহস নেই যে ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে একজন মুসলিমকে বাংলাদেশে আসতে দিবে! অথচ এরাই কথায় কথায় ভারতবিরোধীতার কথা বলে। এরা কিভাবে দেশকে ভারতের বলয় থেকে বের করে নিয়ে আসবে আর দেশের সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখবে?
একটি মুশরিক রাষ্ট্র একজন মুসলিমকে শুধুমাত্র ইসলাম প্রচারের কারনে বের করে দিল, আর সরকারও সেটাকে সঠিক হিসেবে মেনে নিয়ে তাদের সাথে একাত্নতা ঘোষণা করল! এটি শুধুমাত্র সেক্যুলার শাসকদের পক্ষেই সম্ভব। পক্ষান্তরে আমরা দেখেছি মদিনার আনসাররা পুরো আরব উপদ্বীপের বিরুদ্ধে গিয়ে মক্কার মুহাজিরদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল। সুতরাং শুধুমাত্র জাকির নায়েক নন যেকোন দেশের যেকোন মুসলিমেরই অধিকার আছে যেকোন মুসলিম দেশে ভ্রমনের ও ইসলাম প্রচারের। আর তা শুধুমাত্র তখনই সম্ভব যখন ঐ মুসলিম রাষ্ট্রটি ইসলামী ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হবে এবং কাফির মুশরিকদের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে ইসলামের পররাষ্ট্র নীতি দ্বারা পরিচালিত হবে। সেজন্যেই আমরা দেখতে পাই ইবনে বতুতার মত মুসলিম পরিব্রাজকরা মরক্কো থেকে চীন পর্যন্ত বিনা বাধায় কয়েক দশক সারা মুসলিম বিশ্বে বিচরণ করেছেন এমনভাবে যেন তিনি তার স্থানীয় শহরেই ঘোরাফেরা করছেন। কোন অনুমতি কিংবা ভিসার প্রয়োজন নেই। ইনশা’আল্লাহ খিলাফত-এর প্রত্যাবর্তনের পর জাকির নায়েকের ঢাকায় আসা কিংবা বাংলাদেশের কারো দিল্লি, করাচি, লাহোর কিংবা কাবুল যাওয়া হবে সাধারণ ব্যাপার।
- মো. হাফিজুর রহমান
