৪ বিষয়ে কীভাবে একটি গণভোটের সিদ্ধান্ত নিতে হবে জানালেন আসিফ নজরুল

 


খবরঃ 

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, “সাধারণ নির্বাচনে যখন কোনও একটি দলকে ভোট দেওয়া হয় তখন কি সব কিছু পছন্দ করেন? সব করেন? সব তো করেন না। আপনি বিচার করেন অপছন্দনীয় কতোগুলা ব্যাপার আছে, পছন্দনীয় কতোগুলা ব্যাপার আছে, দুইটা সাইডে বিচার বিবেচনা করে আপনি ভোট দেন। এখানে চারটি প্রস্তাব, সবগুলো সংস্কার প্রস্তাব। সুতরাং চারটি প্রস্তাব বিবেচনা করে আপনার যদি মনে হয় অধিকতর সম্মত তাহলে ‘হ্যাঁ’ দেবেন, আর অসম্মত হলে ‘না’ দেবেন।” (https://www.banglatribune.com/national/924230/৪-বিষয়ে-কীভাবে-একটি-গণভোটের-সিদ্ধান্ত-নিতে-হবে)

মন্তব্যঃ

২০২৪-এর কোটা আন্দোলনের সময় শুধু সেই ইস্যুর সাথে সম্পর্কিত মানুষ ছাড়াও সমাজের প্রত্যেক স্তরের মানুষ এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছিল। কারণ তারা এই অন্যায় আর বৈষম্য থেকে একটা চিরস্থায়ী মুক্তি চেয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত হতাশার বিষয় এই যে, গত দেড় বছর ধরে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের আলোচনা বাদ দিয়ে “কিভাবে এক হাসিনায় আটকে না থেকে কয়েক হাসিনা মিলে ক্ষমতা ভাগ করে নেয়া যায়”- এই আলোচনাই ছিল মুখ্য। আলোচিত গণভোটে হ্যাঁ কিংবা না যেটাই জয়যুক্ত হোক না কেন, তাতে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের কি কোন দিক নির্দেশনা দেয়া আছে? বেকারত্ব, দারিদ্র্যতা, মূল্যস্ফীতি, শিক্ষার অবকাঠামো, বহিঃশক্তির আধিপত্য রুখে দাঁড়ানো, প্রাকৃতিক সম্পদ, বন্দর ইত্যাদি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বেহাত হওয়া বন্ধ করা ইত্যাদি কোন কিছুর সিদ্ধান্ত কি এই হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে? – না। তাহলে এই হ্যাঁ-না ভোটের যৌক্তিকতা কি যেখানে জনগণেরই কোন স্বার্থ নেই? হ্যাঁ জয়যুক্ত হলে ক্ষমতার রাজনীতিতে কতিপয় দলের সুবিধা, আর না জয়যুক্ত হলে বিএনপির একচ্ছত্র আধিপত্য প্রাপ্তির সুবিধা। অর্থাৎ, ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারাই হচ্ছে মূল বিষয়। এই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনীতির আলোচনা ও সিদ্ধান্তের বিষয়বস্তু যেখানে জনগণ মূল্যহীন।

জনগণ চায় নিজের বিশ্বাস এবং আবেগ “ইসলাম” দিয়ে শাসিত হতে। জনগণ চায় বহিঃশক্তির দালালীবিহীন শাসনব্যবস্থা। জনগণ  চায় এমন একটা ব্যবস্থা যা তার মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা দেবে। একমাত্র ইসলামী ব্যবস্থা জনগণের এই সকল আকাঙ্ক্ষা পূরণের সক্ষমতা রাখে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরনো বস্তাপচা ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বহাল রেখেছে, যা জনগণকে বাদ দিয়ে কতিপয় পুঁজিপতি এবং কাফির-উপনিবেশবাদীদের স্বার্থরক্ষা ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করে।

আমাদের প্রশ্ন করা উচিৎ, কুফর ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বহাল রেখে, এর কিছু সংস্কারের লক্ষ্যে আয়োজিত এই গণভোটে কি লাভ? যখন আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মানব রচিত সকল ব্যবস্থার উপর ‘না’ নির্ধারিত করে দিয়েছেন, তখন শাসকগোষ্ঠী কোন সাহসে এটিকে মানুষের ইচ্ছার উপর অর্পন করে? আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সূরা মায়িদাহর ৪৪, ৪৫ এবং ৪৭ নং আয়াতে বলেন, “যারা আল্লাহ্‌ যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে বিচার করে না— তারা কাফির”, “আল্লাহ্‌’র বিধান ছাড়া যারা বিচার করে— তারা যালিম”, “আল্লাহ্‌’র আইন ছাড়া যারা বিচার করে— তারা ফাসিক”। তবে কি তারা আমাদেরকে কাফির, জালিম আর ফাসিক বানানোর পথ সুগম করছে? একজন মুসলিমের কাছে কখনো আল্লাহ্‌’র আইন গ্রহণ এবং মানবরচিত আইন বর্জন কোন ঐচ্ছিক নয়, বরং বাধ্যতামূলক। “আমি জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করেছি” [সূরা আয যারিয়াত-৫৬]। তবে ইসলামী রাষ্ট্র খিলাফতে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রদত্ত হারাম এবং হালালের সীমানার মধ্যে খলিফার চাওয়া সাপেক্ষে গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। যেমনঃ “রাজধানী স্থানান্তর হবে কি হবে না?”, “নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করা উচিৎ কি না?”, “এলাকায় নতুন খাল খনন করা হবে কি না??” ইত্যাদি মুবাহ্‌ সংক্রান্ত বিষয়। 

    -     জাবির জোহান


Previous Post Next Post