খবরঃ
বিদ্যুৎবেগে মাত্র দুই সপ্তাহের অস্বাভাবিক তাড়াহুড়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চর কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার চুক্তি সম্পন্ন করা হচ্ছে সোমবার। লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান মায়র্কসের মালিকানাধীন এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে ৪৮ বছর দীর্ঘমেয়াদি (১৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ) ইজারা চুক্তিটি হচ্ছে রাজধানী ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচাও আন্দোলনরত শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) চট্টগ্রামের যুগ্ম আহ্বায়ক জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক সাবেক বন্দর সিবিএ সেক্রেটারি কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার আজ সকালে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, 'দেশবাসীকে অন্ধকারে রেখে অতি তাড়াহুড়ো করে লালদিয়া চর কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা প্রদানের চুক্তি স্বাক্ষরের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঝটিকা বেগে লালদিয়া টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারার তোড়জোড় বা তাড়াহুড়ার ধাপগুলো মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করে নেয়া হয়েছে (https://dailyinqilab.com/bangladesh/news/831763)
মন্তব্যঃ
দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূরাজনৈতিক বিপদের আশঙ্কাকে কোনরুপ তোয়াক্কা না করেই অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগের (FDI) মোড়কে দেশের কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনালগুলোকে একের পর এক বিদেশী কোম্পানীর হাতে ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া চালু রেখেছে। অন্তর্বর্তী সরকার কিছুদিন আগেই জনগণের তুমুল প্রতিবাদের সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল মার্কিন নেভীর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও তাদের সামরিক স্বার্থে ব্যবহৃত ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর আবারও দেশবাসীকে অন্ধকারে রেখে বিদ্যুৎবেগে মাত্র দুই সপ্তাহের অস্বাভাবিক তাড়াহুড়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চর কন্টেইনার টার্মিনালকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত আরেক প্রতিষ্ঠান ডেনমার্কের মায়র্কস (Maersk) কোম্পানির মালিকানাধীন এপিএম (A.P Mollar) টার্মিনালসের হাতে তুলে দেওয়ার চুক্তি সম্পন্ন করল সরকার। ডিপি ওয়ার্ল্ডের মত ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান Maersk এর সাথেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক গভীর ও বহুপাক্ষিক, যারা শিপিং, সামরিক কার্গো, টার্মিনাল অপারেশন এবং লজিস্টিক সেক্টরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক কার্গো পরিবহনের জন্যও কুখ্যাত! তাই বাংলাদেশের কৌশলগত সমুদ্র বন্দরের টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে মার্কিন প্রভাবাধীন বিভিন্ন কোম্পানীর হাতে তুলে দিয়ে সরকার যে মূলত আমাদের দেশ ও কৌশলগত বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নিয়ন্ত্রণকে আরও সুসংহত করছে এবং আমাদের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিচ্ছে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির (Indo Pacific Strategy) জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। লালদিয়া টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চিম প্রান্তে, কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এবং বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার। এই টার্মিনালটি গভীর ড্রাফট জাহাজ নোঙর করার উপযোগী এবং এই টার্মিনালে আধুনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সুবিধা থাকায় এটি বড় জাহাজে অস্ত্র, খাদ্য, সামরিক সরঞ্জাম, জ্বালানি, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি আনলোডের উপযুক্ত স্থান। এই টার্মিনাল মার্কিন IPS’ এর Supply Chain Resiliency এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-জাপান সহ অন্যান্য কোয়াড অংশীদারদের জন্য সম্ভাব্য বিকল্প ও আঞ্চলিক লজিস্টিক নোড হতে পারে। আর চীন যেহেতু 21st Century Maritime Silk Route এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম এলাকায়(কর্ণফুলী টানেল, CEIZ ইত্যাদি) তার বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তার সমর্থিত কিংবা US-Aligned বন্দর অপারেটরদের মাধ্যমে আমাদের কৌশলগত বন্দর ও টার্মিনালগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। সুতরাং, আমাদের কৌশলগত লালদিয়া টার্মিনালকে বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার মানে হচ্ছে দেশের কৌশলগত সম্পদকে উপনিবেশিক শক্তির লালসা মেটাতে ভাড়া খাটানো, এবং খাল কেটে কুমির ডেকে আনা।
বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পুতুল শাসকরা কখনোই উম্মাহ্’র কৌশলগত সম্পদ ও সার্বভৌমত্বকে কাফির ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে সমর্পণ করা এবং এই অঞ্চলকে তাদের বিচরণস্থলে পরিণত করা বন্ধ করবে না, কারণ তারা কাফির ঔপনিবেশিকদের করুণায় ক্ষমতায় আসে ও তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই ক্ষমতায় টিকে থাকে। এই শাসকরা কখনই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না, এবং তারা আমাদের সম্পদ এবং সার্বভৌমত্বের বিষয়েও চিন্তা করে না। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাদের এই নির্বোধ শাসকদের বিষয়ে সর্তক করে বলেন, “মানুষের উপর প্রতারণার বছরগুলো আসবে ……তখন রুওয়াইবিদা কথা বলবে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল! রুওয়াইবিদা কারা? তিনি (সাঃ) বললেন, নির্বোধ ব্যক্তি যারা জনগণের বিষয়ে কথা বলবে” (সুনান ইবনে মাজাহ)। আমাদের উচিত বিশ্বাসঘাতক ধর্মনিরেপেক্ষ এই সকল নির্বোধ শাসকগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আদর্শ অনুসরণ করে প্রতিশ্রুত খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই নির্বোধ শাসকদের দুঃশাসনের অবসান করা। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই পারবে শরীয়াহ অনুযায়ী আমাদের সমুদ্র বন্দরের মত কৌশলগত সম্পদ ও স্থাপনাগুলোকে বিদেশী ঔপনিবেশিকদের দখলদারিত্ব থেকে রক্ষা করে নিজেদের সক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনায় এগুলোকে সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজে লাগাতে, কারণ শরীয়াহ্ নীতি অনুযায়ী সমুদ্র বন্দর হচ্ছে গণমালিকানাধীন সম্পদ যার বেসরকারীকরণ নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “তিন প্রকার সম্পদে সকল মুসলিম অংশীদার; আর তা হলো আগুন, পানি ও সবুজ চারণভূমি” (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ্)। খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের সম্পদ ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত কোন পরাশক্তিকে পরোয়া করবে না এবং কূটনৈতিক ও প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও দ্বিধা করবে না। সুতরাং, কেবলমাত্র ইসলামের প্রকৃত অভিভাবক - নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ্ ফিরিয়ে আনার মাধ্যমেই আমরা দেশের সম্পদসমূহের যথাযথ সুবিধা উপভোগ করতে পারি এবং ইসলামের নেতৃত্বে এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারি। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “তিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন যেন এই দ্বীন অন্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী হয়, যদিও মুশরিকগণ তা অপছন্দ করে” (সূরা আত-তাওবাহ্: ৩৩)।
- কাজী তাহসিন রশীদ
